দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধারাবাহিকভাবে কমছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণের এই নিম্নমুখী ধারা ধরে রাখতে হলে টিকাদান কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। নইলে সংক্রমণ আবারো বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, আবার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া বিচিত্র কিছু না। এজন্য সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন, বেলারুশসহ কয়েকটি দেশে সংক্রমণ আবার বেড়েছে। কোনো নতুন ভেরিয়েন্টের উদ্ভব হয় বা আগের ভাইরাস থেকেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। তিনি বলেন, এ কারণে সংক্রমণ প্রতিরোধে আমাদের চলমান কার্যক্রমে কোনোভাবেই ঢিলেমি করা যাবে না। যত সম্ভব বেশি মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে। এতে সংক্রমণ ঠেকানো না গেলেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মানুষের মৃত্যুর হার কমানো যাবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ডা. বেনজীর আহমেদও বলেন, পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক হলেও সংক্রমণ যে নতুন করে হবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এই স্বস্তি সাময়িক না চলমান থাকবে তা নির্ভর করবে করোনাভাইরাস ঠেকাতে গৃহীত কার্যক্রমের ওপর। তিনি বলেন, এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো যত দ্রুত সম্ভব টিকার কাভারেজ বাড়ানো। যদি দুই-তিন মাসের মধ্যে ১৮ বছরের ঊধর্ে্ব যত মানুষ আছে, তাদের ৮০ শতাংশকে টিকা দিতে পারি, তাহলে আমরা একটা স্বস্তির জায়গায় যাব। এরপর আসবে ১৮ বছরের নিচে বাচ্চারা। অর্থাৎ আগামী ছয় মাসের মধ্যে যদি আমাদের ১৮ কোটি মানুষের ৮০ ভাগকে টিকা দিতে পারি তাহলে আমরা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারব।
প্রায় ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশে শুক্রবার পর্যন্ত দুই ডোজ কোভিড টিকা পেয়েছে ১ কোটি ৯৯ লাখ ৯৪ হাজার ৪৭৪ জন। আর টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৬১ হাজার ১৬২ জন। টিকা নিয়ে নিবন্ধন করেছে প্রায় ৬ কোটি মানুষ। প্রাপ্ত বয়স্কদের পর সরকার এখন ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদেরও টিকা দেয়া শুরু করতে যাচ্ছে। পরীক্ষামুলক প্রয়োগের পর এ মাসেই তা দেয়া শুরু হবে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইতোমধ্যে জানিয়েছেন। দেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম মৃত্যু নিশ্চিত হয় তার ১০ দিন পর ১৮ মার্চ। করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউয়ের সময় গত বছরের জুলাইয়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা, নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী শনাক্তের হার এবং মৃত্যু তিনটাই বেশি ছিল। ২ জুলাই ৪ হাজার ১৯ জন রোগী শনাক্ত হয়। ডেল্টা ধরন আসার আগে বাংলাদেশে এটাই ছিল একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী শনাক্ত। ১২ জুলাই ৮ হাজার ৬৮টি নমুনা পরীক্ষা করে ২ হাজার ৬৬৬ জনের করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। শতকরা হিসেবে যা ৩৩ দশমিক ৪ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্তের শতকরা হারে এটাই সর্বোচ্চ। ৩০ জুলাই একদিনে ৬৪ জনের মৃত্যু হয় যা ডেল্টা ভেরিয়েন্ট আসার আগে একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যু। গত বছরের ২ মে থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত টানা সাড়ে পাঁচ মাসের বেশি সময় নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী রোগী শনাক্ত ১০ শতাংশের বেশি ছিল। আর গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৭ মার্চ পর্যন্ত শনাক্তের হার ছিল ১০ শতাংশের নিচে। ১৩ ফেব্রুয়ারি সবচেয়ে কম ২৯১ জন রোগী শনাক্তের খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এদিন শনাক্তের হার সবচেয়ে কম, ২ দশমিক ২৬ শতাংশ ছিল। ডেল্টা ভেরিয়েন্টের প্রভাবে চলতি বছরের মার্চের পর থেকেই সারাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করে। এ সময় আক্রান্ত ও মৃত্যুর নতুন নতুন রেকর্ড হয়। ১০ মার্চ শনাক্ত রোগীর সংখ্যা হাজার ছাড়ায়, ১৮ মার্চ শনাক্তের হার ১০ শতাংশের উপরে উঠে যায়। ২৮ জুলাই বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে দৈনিক রোগী শনাক্তের নতুন রেকর্ড হয়, এদিন ১৬ হাজার ২৩০ জনের আক্রান্তের খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ২৪ জুলাই শনাক্তের হার দাঁড়ায় ৩২ দশমিক ৫৫ শতাংশে। ৫ এবং ১০ আগস্ট দুদিনই দৈনিক ২৬৪ জনের মৃত্যু হয়। একদিনে এটাই সর্বাধিক মৃত্যু।
মন্তব্য করুন