জাতীয়

উগ্রবাদের বিরুদ্ধে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে -হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম

আমাদের আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ঐতিহ্যবাহী পন্নী পরিবারের সন্তান এমামুয্যমান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী আন্দোলনের ধ্রুত নীতি গ্রহণ করেছিলেন, যে আমরা কখনোই দেশের আইনভঙ্গ করব না, প্রচলিত রাজনৈতিক ধান্ধাবাজি দাঙ্গাবাজির সঙ্গে সম্পৃক্ত হব না। বিগত আটাশ বছরে আমরা প্রমাণ করেছি যে, আইন মান্য করেও আন্দোলন করা যায়। আল্লাহর রহমে কেউ বলতে পারবে না যে হেযবুত তওহীদ কোনোদিন কোনো আইনভঙ্গ করেছে বা কোনো অপরাধ করেছে। এটা আমাদের আদর্শের শক্তির একটা পরিচয়।

বর্তমানে সমগ্র বিশ্বজুড়ে যে সংকট চলছে তার প্রভাব আমাদের দরিদ্র দেশেও পড়েছে। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, এই সংকট থেকে মুক্তির একটি মাত্র পথই আছে। সেটা হচ্ছে আল্লাহর তওহীদের ভিত্তিতে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা আল্লাহর চেয়ে বেশি জানি না, তিনিই সর্বজ্ঞ। তাই মুক্তির যে পথ আল্লাহ তাঁর আখেরি নবী মোহাম্মদ (সা.) এর মাধ্যমে পাঠিয়েছেন আমাদের কর্তব্য সেই পথটি অনুসরণ করা। আইয়্যামে জাহেলিয়াতের আরবের গোত্রগুলো স্বার্থ নিয়ে হানাহানি ও দাঙ্গা-হাঙ্গামায় লিপ্ত ছিল।

সেখানে মানুষকে গরু-ছাগলের মত হাটে বাজারে বিক্রি করা হত। নারীদেরকে মানবেতর প্রাণীর মত বিবেচনা করা হত। তাদের যোগ্যতার কোনো মূল্যায়ন ছিল না। মেয়ে শিশুদেরকে জীবন্ত কবর দিয়ে দিত অনেক পিতা। ধর্মব্যবসায়ীরা যে বিধান রচনা করে আল্লাহ ও উপাস্য দেবতার নামে চালিয়ে দিত। আল্লাহর প্রেরিত জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে এই জাহেলি সমাজকে আল্লাহর রসুল শান্তিময় একটি সমাজে পরিণত করেছিলেন। আজ আমাদেরকেও চলমান সংকট, হানাহানি, অন্যায় অবিচার, অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে হলে আল্লাহর দেওয়া জীবনবিধান প্রতিষ্ঠা করার কোনো বিকল্প নেই। এই প্রস্তাবটি নিয়েই মাঠে কাজ করছে হেযবুত তওহীদ।
আমাদের এই সত্যনিষ্ঠ আন্দোলনের বিরুদ্ধে ধর্মব্যবসায়ী একটি গোষ্ঠী অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এই গোষ্ঠীটি এতকাল ধরে ধর্মকে পুঁজি করে মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে ছিনতাই করে বহু উগ্রবাদী তাণ্ডব, জাতিবিনাশী কর্মকাণ্ড, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা বিভিন্ন ইস্যুকে আশ্রয় করে দেশের পরিস্থিতিকে অরাজকতাপূর্ণ করে তুলে স্বার্থ হাসিল করতে পটু। তারা এখন হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম অপবাদ ও গুজব রটনা করে ওয়াজের মাঠ গরম করে তুলেছে। তাদের প্রতিটি মিথ্যাচারের জবাব আমরা দিয়ে যাচ্ছি কিন্তু ধর্মান্ধ জনগোষ্ঠী তাদের বক্তব্যে প্রভাবিত হয়। তাদের কথায় হেযবুত তওহীদের বিষয়ে একটি নেতিবাচক ধারণা তাদের মনে মগজে লালন করে থাকে। পরিণমে আমাদের নির্দোষ সদস্যরা মাঠে ময়দানে অগণিতবার জঙ্গিবাদী হামলার শিকার হয়েছে, আক্রান্ত হয়েছে, আমাদের পাঁচজন সদস্যকে তাদের পৈশাচিক হামলার শিকার হয়ে প্রাণ পর্যন্ত দিতে হয়েছে।
আমরা বলতে চাই, ইসলাম এমন একটি জীবনব্যবস্থা যা পৃথিবীর মানুষের যে কোনো সংকট সমাধান করতে সক্ষম। ইসলাম এসেছে মানুষকে অন্যায় অবিচার থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য, উগ্রবাদ বিস্তারের জন্য নয়। আমরা যে আল্লাহ-রসুলের প্রকৃত ইসলাম নিয়ে দাঁড়িয়েছি, এটা দিবালোকের মত পরিষ্কার। এ পর্যন্ত আমাদের একটি কথাকেও কেউ ভুল প্রমাণ করতে পারেনি। ধর্মব্যবসায়ী উগ্রবাদী গোষ্ঠীটি বহু আগেই আমাদের কাছে আদর্শিকভাবে পরাজিত হয়ে হিংসার পথ, সন্ত্রাসের পথ, ধর্মান্ধ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে তাদের ধর্মীয় অনুভূতি উস্কে দেওয়ার বর্বর পন্থা অবলম্বন করেছে। কিন্তু আমরা একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের আইনমান্যকারী নাগরিক। আমরা স্বাধীনভাবে আমাদের মত প্রকাশ করতে পারব, ইসলাম প্রচার করতে পারব এটা আমাদের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার। মানুষের স্বাধীনতা আছে- আমাদের বক্তব্য তারা গ্রহণ করতেও পারে, প্রত্যাখ্যানও করতে পারে। তাদেরকে সেই সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু এই ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠীটি জোর করে তাদের মতামত আমাদের উপর চাপিয়ে দিতে চায়, তারা গায়ের জোরে আমাদের কণ্ঠকে থামিয়ে দিতে চায়। তাদের এই অপচেষ্টা সফল হবে না ইনশাল্লাহ।
ইতোমধ্যে বাংলার মানুষের কাছে আমাদের বক্তব্য পৌঁছে গেছে।

মানুষ ধর্মব্যবসায়ীদের প্রতারণার বিরুদ্ধে, অন্ধত্বের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে। হেযবুত তওহীদের ডাকে উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সারাদেশ এক গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। যারা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ফতোয়ার জাল বিস্তার করছেন, আমাদেরকে হুমকি দিচ্ছেন, তাদের প্রতি আহ্বান জানাবো, এখনও সময় আছে এই অন্যায় আচরণ থেকে আপনারা বিরত হন। যে সংকট চলছে, তা আমাদের জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলকেই গ্রাস করবে। আমরা সেই সংকট মুক্তির জন্য যে প্রস্তাব করছি, সেটা কেবল আমাদের নিজেদের মুক্তির জন্য নয়, জাতির সকলের মুক্তির জন্য। আমরা মনে করি তওহীদের ভিত্তিতে অর্থাৎ আল্লাহর হুকমের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়াই হচ্ছে এই মুক্তির একমাত্র উপায়। ঐক্যের বিপরীতে কোনো ধরনের দলবাজি হানাহানি ইসলামের ধারনার সম্পূর্ণ বিপরীত।

হেযবুত তওহীদ যে মহাসত্য তুলে ধরছে আমরা মনে করি সাধারণ মানুষ যদি এই সত্য জানতে পারে অর্থাৎ ইসলামের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে, ইসলামের প্রকৃত আদর্শকে অনুসরণ করতে পারে, তবে সমস্ত রকম অন্যায় থেকে জাতি মুক্তি পাবে।
এখানে আপনারা যারা হেযবুত তওহীদের সদস্য আছেন, আপনাদের প্রতি আমার কথা হচ্ছে, আমাদেরকে সকল বিপদে মুসিবতে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। আপনারা নবী করিম (সা.) এর সংগ্রামী জীবনের কথা স্মরণে রাখবেন। রসুল এবং তাঁর সাহাবীগণ অবর্ণনীয় মিথ্যাচার, জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যারাই যুগে যুগে সত্য ও ন্যায় নিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, তাদেরকেই অবর্ণনীয় কষ্ট স্বীকার করতে হয়েছে, না খেয়ে থাকতে হয়েছে, দেশ থেকে পর্যন্ত বিতাড়িত হতে হয়েছে। হেযবুত তওহীদের বেলায়ও এর ব্যতিক্রম হবে না। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে এ জাতি প্রায় তিনশ বছর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ব্রিটিশ ইউরোপিয়ান খ্রিস্টানদের দাসত্ব করেছে। ওই সময়ে ওই সময়ে তারা একটা বিকৃত শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে। জাতির মধ্যে তাদের তৈরি সুদভিত্তিক অর্থনীতি, বিচারব্যবস্থা, এ জাতির উপর চাপিয়ে দিয়েছে, হানাহানির রাজনীতি চালু করে দিয়েছে।
এখন হেযবুত তওহীদ দাঁড়িয়েছে সেই শান্তিময় সোনালি দিন আবার ফিরিয়ে আনার জন্য। সেজন্য আমাদেরকে অসম্ভব কোরবানি স্বীকার করতে হবে। সবর অবলম্বন করতে হবে। নিজেদের মধ্যে ইস্পাতের মত ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে। মনে রাখতে হবে, নেতার হুকুম পালন করা আমাদের জন্য ফরজ। আল্লাহর হুকুম, রসুলের হুকুম ও আমিরের হুকুম আমাদেরকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার হবে, মিথ্যাচার হবে, জালিয়াতি হবে। এসব অপপ্রচার মিথ্যাচার ও জুলুমের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। কোনোভাবেই হতাশ হওয়া যাবে না, নিরুৎসাহিত হওয়া যাবে না, ভয় পাওয়া যাবে না। যে কোনো বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে হবে।
যেসব ধর্মব্যবসায়ী হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে তারা অচিরেই সাধারণ মানুষের হৃদয় থেকে বিতাড়িত হবে। কারণ তাদের মুখোস হেযবুত তওহীদ ইতোমধ্যে খুলে দিয়েছে। মানুষ তাদের লেবাসের আড়ালে থাকা কদর্য রূপ চিনতে পারছে। তারা আমাদের বিরুদ্ধে যতই ষড়যন্ত্র করুক, তারা আল্লাহর সাহায্য পাবে না, বরং তারা আল্লাহর ক্রোধের পাত্র হবে। যারা আল্লাহর গজব ও লানতের পাত্র হয় তাদেরকে ধ্বংস করার জন্য অন্য কারো প্রয়োজন হয় না। তাদেরকে জবাব দিতে হবে যৌক্তিকভাবে, দৃঢ়তার সাথে। এই শ্রেণিটি যুগে যুগে সত্যনিষ্ঠ নবী-রসুল ও মো’মেনদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। বহু নবীকে তারাই হত্যা করেছে। হেযবুত তওহীদের বেলায়ও এর কোনো ব্যতিক্রম হবে না। আমরা উগ্রবাদ জঙ্গিবাদ ধর্মব্যবসা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সঠিক আদর্শ লাভ করেছি। সাধারণ মানুষের প্রতি আমাদের আহ্বান, আপনারা আমাদের বক্তব্য শুনুন, সত্যমিথ্যা যাচাই করুন। কারো অপপ্রচারে আর প্রভাবিত হবেন না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker