ধর্ম

গুনাহ হয়ে গেলে করণীয় কী

এখনকার সময়ে গুনাহ করা একেবারেই সহজ। আপনি যখন ঘর থেকে বের হলেন তখন রাস্তায় বেপর্দা কোনো নারী দেখলেন। তখনই মনের মধ্যে যদি খারাপ কোনো চিন্তা আসে তাহলেই গুনাহ হয়ে গেল।
যখন আপনি কলেজের বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছেন তখন তারা তাদের গার্লফ্রেন্ড নিয়ে আলাপ করছে বা আরো অনেক কিছু।
যখন আপনি নির্জনে গিয়ে মোবাইল থেকে অশ্লীল কিছু দেখে ফেললেন তখন গুনাহ হয়ে গেল।
যখন মিথ্যা বললেন, ধোঁকাবাজি করলেন বা আমানত নষ্ট করলেন তখন গুনাহ হয়ে গেল।
এভাবেই নিয়মিত আমাদের ভালো আমল থেকে বদ আমল বেশি হচ্ছে।

এখন গুনাহ হয়ে গেলে আপনি কী করবেন?

ক্ষমার কোনো পথ আছে? হ্যাঁ নিশ্চয়ই আছে। কারণ আল্লাহ ক্ষমাশীল এবং তাওবা কবুলকারী।
-একজন মুসলিম যখন গুনাহ করে ফেলে তখন তার প্রথম কাজ হলো তওবা করা, প্রত্যাবর্তন করা, ফিরে আসা। আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা যদি পাপাচার করতে, এমনকি তোমাদের পাপ আকাশের সীমা পর্যন্ত পৌঁছে যেত, অতঃপর তোমরা তওবা করতে, তাহলে আল্লাহ অবশ্যই তোমাদের তওবা কবুল করবেন।
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বর ৪২৪৮

-গুনাহ করে ফেললে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। সে যদি ভালো কাজ করে। আর সে ভালো কাজগুলো প্রকৃতিগতভাবেই খারাপ আমলগুলো মিটিয়ে দেয়। আল্লাহ পাক সূরা হুদের ১১৪ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘আর তুমি সালাত কায়েম করো দিবসের দুই প্রান্তে এবং রাতের প্রথম অংশে। নিশ্চয়ই ভালো কাজ মন্দ কাজকে মিটিয়ে দেয়। এটি উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য উপদেশ’।
-ওই ব্যক্তি জীবিত বা মৃত থাকা অবস্থায় কোনো মুমিন তার জন্য দোয়া করলে তার গুনাহ ক্ষমা হয়।

মুমিনদের জন্য দোয়া করা নবীদের সুন্নত ছিল। নবী নূহ আ: আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন, ‘হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন এবং ধ্বংস ছাড়া আপনি জালিমদের আর কিছুই বাড়িয়ে দেবেন না।’ সূরা নূহ ২৮

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা ‘আব্বাস রা: বলেন, বানু সাঈদাহর নেতা সা’দ ইবনু উবাদাহ রা:-এর মা মারা গেলেন। তখন তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার মা আমার অনুপস্থিতিতে মারা গেছেন। এখন আমি যদি তার পক্ষ থেকে সদকা করি, তবে তা কি তার কোনো উপকারে আসবে? তিনি বলেন, হ্যাঁ। সা’দ রা: বললেন, ‘তাহলে আপনাকে সাক্ষী করে আমি আমার মিখরাফের বাগানটি তার উদ্দেশ্যে সদকা করলাম। সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ২৭৬২

– দুনিয়া জীবনে অশান্তি-দুঃখ-কষ্ট দিয়েও গুনাহ ক্ষমা করা হয়।

উম্মুল মুমিনিন মা আয়েশা রা: বলেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: মুসলিম ব্যক্তির ওপর যে সব বিপদ-আপদ আসে এর দ্বারা আল্লাহ তার পাপ দূর করে দেন। এমনকি যে কাঁটা তার শরীরে ফুটে এর দ্বারাও। সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ৫৬৪০

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি কেউ গুনাহ করে ফেলে, তারপর পবিত্রতা অর্জন করে দুই রাকাত সালাত আদায় করে আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তবে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। তিরমিজি হাদিস নম্বর ৩২৭৬
আমাদের সবার দ্বারাই গুনাহ হচ্ছে। কেউ কম, কেউ হয়তো বেশি।

আল্লাহ পাক সূরা জুমার ৫৩ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘সব আদম সন্তান পাপী’।

আমরা গুনাহ করলেও আল্লাহ তায়ালা আমাদের আশার বাণী শুনিয়ে বলেছেন, ‘বলুন, হে আমার গোলামেরা, যারা নিজেদের ওপর জুলুম করছ, তোমার আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল। পরম দয়ালু’। সূরা জুমাহ ৫৩

আসুন গুনাহ হয়ে গেলে হতাশ না হয়ে পবিত্রতা অর্জন করে, দুই রাকাত সালাত আদায় করে তওবা করে ফিরে আসি। ক্ষমা প্রার্থনা করি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker