জাতীয়

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

সদ্য সমাপ্ত ১৫ দিনের জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলনে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (১৫ মে) বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়েছে।

গত ২৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর এ ত্রিদেশীয় সফর শুরু হয়। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে ওইদিন সফরের প্রথম ধাপে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ চার্টার্ড ভিভিআইপি ফ্লাইট (বিজি১৪০৩) স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে টোকিওর হানেদা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বিমানবন্দরে লালগালিচা সংবর্ধনা এবং রাষ্ট্রীয় গার্ড অব অনার দেয় জাপান।

দেশটিতে চারদিনের সরকারি সফর শেষে গত ২৮ এপ্রিল টোকিও থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী তার জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফরের দ্বিতীয় ধাপে হানেদা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটে তিনি ওয়াশিংটন ডিসির ডালাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় এক সপ্তাহের সরকারি সফর শেষে ওয়াশিংটন ডিসির স্থানীয় সময় ৪ মে বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট ওয়াশিংটন ডিসির ডালাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের পথে যাত্রা করে। রাজা তৃতীয় চার্লসের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ওইদিন স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৪৯ মিনিটে লন্ডনে পৌঁছান বাংলাদেশের সরকারপ্রধান।

বিমানবন্দরে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র বোন শেখ রেহানাও তার সঙ্গে ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরকালে কৃষি, মেট্রোরেল, শিল্প উন্নয়ন, জাহাজ রিসাইক্লিং, শুল্ক সংক্রান্ত বিষয়াদি, মেধাসম্পদ, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, আইসিটি ও সাইবার নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয়ে আটটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি সইয়ের পর একই দিনে তিনি তার জাপানি সমকক্ষ ফুমিও কিশিদার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। ২৬ এপ্রিল শেখ হাসিনা জাপানের সম্রাট নারুহিতোর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

প্রধানমন্ত্রী ২৭ এপ্রিল ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য চার জাপানি নাগরিকের কাছে ‘ফ্রেন্ডস অফ লিবারেশন ওয়ার অনার’ হস্তান্তরের পাশাপাশি একটি বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন ও কমিউনিটি সংবর্ধনায়ও যোগ দেন।

টোকিও সফরকালে প্রধানমন্ত্রী জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োশিমাসা হায়াশির পাশাপাশি জাইকা, জেট্রো, জেবিক, জেবিপিএফএল ও জেবিসিসিইসি নেতাদের সঙ্গে একাধিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যোগ দেন। এছাড়াও তিনি জাপানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের স্ত্রী আকি আবে এবং জাপানি স্থপতি তাদাও আন্দোর সঙ্গেও বৈঠক করেন।

যুক্তরাষ্ট্র সফরের দ্বিতীয় ধাপে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের অংশীদারত্বের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠান এবং মার্কিন ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক, বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠক ও একটি নাগরিক সংবর্ধনাসহ কিছু পার্শ্ব ইভেন্টে যোগ দেন।

লন্ডনে শেখ হাসিনার সফরের তৃতীয় ধাপে তিনি ওয়াশিংটন ডিসি থেকে যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য কমনওয়েলথ রাজ্যের রাজা ও রানি হিসেবে চার্লস তৃতীয় এবং তার পত্নী ক্যামিলার রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এছাড়া তিনি রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লিভারলি এবং তার স্ত্রী সুসানা স্পার্কস লন্ডনের ক্লারিজ হোটেলে অবস্থানকালে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

এছাড়াও লন্ডনে প্রধান ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুক এবং রানি জেসুন পেমার সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার এবং কমনওয়েলথ মহাসচিব ব্যারনেস প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ডও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার অবস্থানস্থলে সাক্ষাৎ করেন।

এপর ৮ মে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। ফ্লাইটটি ৯ মে সকাল ১০টা ৬ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। এসময়ের সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker