কুষ্টিয়া বার্তাজেলা সংবাদ

হেজবুত তওহীদ কর্মী সুজনকে কুপিয়ে হত্যার প্রতিবাদে কুষ্টিয়ায় মানববন্ধন

আলীফ আজগর সবুজ : পাবনা হেজবুত তওহীদ কার্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে সুজন নামের এক কর্মীকে খুন ও দশজন কে গুরুতর আহত করার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও মৌন মিছিল করেছেন কুষ্টিয়া জেলা হেজবুত তওহীদ।

সোমবার সকাল ১০টায় কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাবের সামনে জেলা হেজবুত তওহীদের উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।ঘণ্টাব্যাপী চলা মানববন্ধনে জেলা হেজবুত তওহীদের নেতাকর্মীরা ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারী-পুরুষ অংশ নেন।  এতে বক্তব্য রাখেন- কুষ্টিয়া জেলা হেযবুত তওহীদের সভাপতি আক্কাচ আলী,কেন্দ্রিয় সমন্বয়কারী খুলন -২ শাহারুল ইসলাম,সদর থানা সভাপতি আব্দুল লতিফ, ভেরামারা উপজেলা হেযবুত তওহীদের সভাপতি আয়মান আহাম্মেদ কামাল,দৌলতপুর উপজেলা সভাপতি লতিফুল ইসলাম মিলন,মেহেরপুর জেলা হেযবুত তওহীদের সভাপতি শরিফুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা জেলা হেজবুত তওহীদের সভাপতি জসেব উদ্দিন ও জেলা নারী সম্পাদক সুমাইয়া আক্তার শিখা। প্রমুখ।  আক্কাচ আলী বলেন, দেশে উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু আমরা মানবিক উন্নয়ন চাই, মানুষের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাই। একজন সুজনকে কুপিয়ে হত্যা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। হেজবুত তওহীদের ওপর একের পর এক পরিকল্পিতভাবে উগ্রবাদীদের হামলার কারণে জাতিকে শঙ্কিত ও অরক্ষিত করে তুলেছে।

এদিকে মানববন্ধনের আগে থেকে ব্যানার নিয়ে খণ্ড খণ্ড মৌন মিছিলসহকারে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হেযবুত তওহীদের নেতাকর্মীরা জড়ো হন কর্মসূচিতে।  উল্লেখ্য পাবনা শহরের চরঘোষপুর ৮ নং ওয়ার্ডের ভাটামোড় অবস্থিত কার্যালয়ে গত ২৩ আগষ্ট (মঙ্গলবার) রাত আটটায় জেলা সভাপতি সেলিম শেখ আন্দোলনের ১৫/১৬ জন সদস্যকে নিয়ে সাংগঠনিক বৈঠক করছিলেন। হঠাৎ করে ‘হেযবুত তওহীদের আস্তানা ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও, খ্রিষ্টানের আস্তানা ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’ শ্লোগান দিতে দিতে কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে একদল সশস্ত্র হামলাকারী। তাদের হাতে ছিল ধারালো চাপাতি, হাঁসুয়া, রাম দা, লাঠিসোটা, জিআই পাইপ, লোহার রড ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র। কোনো কথা না বলে তারা বৈঠকে উপস্থিত সবার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে থাকে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে দশজন সদস্য মারাত্মকভাবে আহত হন যাদের একজন পরবর্তীতে মারা যান। রাতেই দুজনকে জরুরি চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে মো. সুজন (৩৩) রাত আড়াইটায় মারা যান এবং গুরুতর আহত আমিনুল ইসলাম (২৭) সেখানে আইসিইউ-তে রয়েছেন, যার অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক। পাবনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন আলামিন শেখ (২৭) ও সেলিম শেখ (৪১)সহ অন্য ছয়জন।

হেযবুত তওহীদের পাবনা জেলা কার্যালয়ে প্রবেশকারী হামলাকারীদের সংখ্যা প্রায় ৪০/৫০ জনের মত ছিল। তবে কার্যালয়ের বাইরেও আরো অনেক সন্ত্রাসী অবস্থান করছিল। হেযবুত তওহীদের সদস্যরা তৎক্ষণাৎ পাবনা সদর থানায় ফোন করে পুলিশের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। কিন্তু ঘটনাস্থলে পুলিশের টিম পৌঁছাতে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা লেগে যায়। পুলিশ পৌঁছালে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। জেলা সভাপতি সেলিম শেখ বাদি হয়ে চিহ্নিত ১৪ জন এবং অজ্ঞাতনামা আরো ১০/১৫ জনের বিরুদ্ধে রাতেই মামলা দায়ের করেন।

আসামীরা হচ্ছে- ১) মো. আলাল (৪৮), পিতা- মৃত হারেজ শেখ, ২) মো. আল আমিন (২২), ৩) মো. এনামুল শেখ (২০), উভয় পিতা-মোঃ আলাল শেখ ৪) মো. ইমরান মোল্লা (১৯), পিতা মৃত ইমারত মোল্লা, ৫) মো. বাপ্পি (১৮), পিতা মো. রাসেল ওরফে ভোলা শেখ, ৬) মো. মারুফ শেখ (২৫), পিতা মো. আছব শেখ,৭) মো. রাসেল ওরফে ভোলা শেখ (৩৫), পিতা মৃত আফা শেখ, ৮) মো. হোসাইন (৩০), পিতা মো. বাদশা শেখ, ৯) মো. বকুল শেখ (৩০), পিতা মো. আনছের শেখ,১০) মো. শান্ত (২২), পিতা মো. জালাল শেখ,১১) মো. আজিম শেখ (৩২), পিতা মো. জুলমত শেখ,১২) মো. সুমন শেখ (৩২), পিতা: মোঃ উম্মত শেখ,১৩) মো. শিমুল মন্ডল (৩৫), পিতা মো. ফজুল মণ্ডল,১৪) মো. রাফিক ডাক্তার (৪৫), পিতা মৃত রওশন মণ্ডল

মানববন্ধনে বক্তাগন বলেন, ‘হেযবুত তওহীদ যেহেতু জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মব্যবসার বিরুদ্ধে সোচ্চার, তাই বেশকিছুদিন থেকেই আমরা উগ্রবাদী সন্ত্রাসীদের একটি হামলার ষড়যন্ত্রের আভাস পেয়েছিলাম। তারা বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন থেকে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে আসছিল এবং অপপ্রচারমূলক মিথ্যা বক্তব্যসংবলিত হ্যান্ডবিল এলাকায় বিতরণ করা হচ্ছিল। এর প্রেক্ষিতে গত মাসেই আমরা পাবনা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলাম। সাধারণ ডায়েরি নং-৩৯৭, তারিখ: ০৬/০৭/২০২২। প্রশাসন সাধারণ ডায়েরিটিকে আমলে নিয়ে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি।

নিলে আজকের এই ঘটনা ঘটত না।’ মানববন্ধনে বক্তাগন এই সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে আরো বলেন, ‘যারা যারা এ হামলা চালিয়েছে এবং যারা পেছন থেকে ইন্ধন যুগিয়েছে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় ও ধর্মীয় সামাজিক পরিচয় যাই হোক না কেন তারা সন্ত্রাসী। কাজেই তাদেরকে বিচারের মুখোমুখী করতে হবে।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker