গানবিনোদন

‘এই পথ যদি না শেষ হয়….’ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রয়াত ‘গীতশ্রী’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অন্ধকার নেমে এল বাংলার সংগীত জগতে। প্রয়াত হলেন ‘গীতশ্রী’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন বাংলার সংগীত জগতের নক্ষত্র। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০।

‘গীতশ্রী’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে সংগীত জগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সংগীত জগতটা যে সন্ধ্যা-হীন হয়ে গেল, তা ভাবতেও পারছেন না তাঁরা। শুধু সংগীত জগত নয়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘বাংলায় সুরের রানি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে গভীরভাবে শোকাহত।

তাঁর প্রয়াণে আমাদের সংগীতের জগত, লাখ-লাখ অনুরাগীদের হৃদয়ে চিরন্তন শূন্যতা তৈরি হল। আমি তাঁকে দিদি হিসেবে দেখতাম। তাঁর প্রয়াণে আমার বড়সড় ব্যক্তিগত ক্ষতি। সাহিত্য অ্যাকাডেমির হৃদয় ছিলেন তিনি। আমরা তাঁকে বঙ্গবিভূষণ (২০১১ সাল), সংগীত মহাসম্মানের (২০১২ সাল) মতো পুরস্কারে ভূষিত করেছিলাম।’

গত ২৭ জানুয়ারি এসএসকেএম হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছিল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে। তাঁর করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছিল। তারপর বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে ভরতি করা হয়েছিল। সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছিল। পরবর্তীতে করোনা মুক্ত হয়েছিলেন। ক্রমশ শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল।

কিন্তু আচমকা তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। মঙ্গলবার হাসপাতালের তরফে মেডিকেল বুলেটিনে জানানো হয়েছিল, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থা সংকটজনক। কমে গিয়েছে রক্তচাপ। পেটের যন্ত্রণাও হচ্ছে। তার জেরে প্রখ্যাত সংগীতশিল্পীকে আইসিইউতে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। রাখা হয়েছিল ভেসোপ্রেসার সাপোর্টে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাতটা ৩০ মিনিট নাগাদ হৃদরোগে আক্রান্ত হন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। তারপর তাঁর মৃত্যু হয়।’

১৯৩১ সালের ৪ অক্টোবর ঢাকুরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। বাবা নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ছিলেন বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ। তাঁর থেকেই গানের তালিম পেয়েছিলেন। ভক্তিমূলক গান শিখেছিলেন বাবার থেকে। প্রথাগত তালিম ছাড়াই মা হেমপ্রভা দেবীও গান গাইতেন। গানের পরিবেশে বড় হয়ে ওঠার মধ্যে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যায় সংগীত। মাত্র ১২ বছর অল বেঙ্গল মিউজিক কনফারেন্সের সংগীত প্রতিযোগিতায় (ভজন বিভাগ) প্রথম হয়েছিলেন।

সেটাই ছিল শুরু। তারপর থেকে বাংলা গানের বিভিন্ন ধারায় মন মাতিয়েছেন তিনি। পেশাদারি সংগীত জীবনের শুরুতেই মুম্বইয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন। গেয়েছিলেন ‘তারানা’ সিনেমায়। পরবর্তী একাধিক হিন্দি সিনেমায় গান গেয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। সঙ্গে বাংলা সংগীতের জগতও আলোকিত হয়ে উঠেছিল সন্ধ্যা যুগে। তাঁর গলায় ‘এই পথ যদি না শেষ হয়.’, ‘ঘুম ঘুম চাঁদ…’, ‘আমি স্বপ্নে তোমায় দেখেছি…‘-র মতো গান আজও বাঙালির মননে অমলিন রয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker