জাতীয়ধর্মসারাদেশ

পত্রিকা বিক্রিতে হেযবুত তওহীদের কর্মীদেরকে বাধা, ঘটেছে হামলার ঘটনাও!

স্টাফ রিপোর্টার: গত প্রায় এক দশক ধরে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পত্রিকা বিক্রি করে ইসলামের প্রকৃত আদর্শ প্রচার করে যাচ্ছে অরাজনৈতিক আন্দোলন হেযবুত তওহীদ। এছাড়াও দুই ঈদসহ সরকারি ছুটির দিনে অন্যান্য পত্রিকা প্রকাশ বন্ধ থাকলে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় দৈনিক বজ্রশক্তি কিংবা দৈনিক দেশেরপত্র পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। বিষয়টি প্রায় সব মহল ইতিবাচকভাবে দেখলেও একটি ধর্মান্ধ শ্রেণির রোষানলে পড়ছেন হেযবুত তওহীদের নিবেদিতপ্রাণ সদস্যরা। এ দৈনিক দেশেরপত্র ও বজ্রশক্তি পত্রিকা বিক্রির সময় দেশের কয়েকটি স্থানে হামলা, মারধর, পত্রিকা ছিনিয়ে নেওয়া, গালিগালাজ, হুমকি-ধামকিসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয় হেযবুত তওহীদের সদস্যরা। আমাদের স্থানীয় প্রতিনিধিদের খবরে বিস্তারিত।

কুষ্টিয়ায় মসজিদের ইমামের উষ্কানিতে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের উপর চরমোনাই ও হেফাজতকর্মীদের হামলা: কুষ্টিয়ায় ঈদের দিন ‘দৈনিক দেশেরপত্র’ বিক্রি করার সময় বাধা ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। গত মঙ্গলবার সকাল ৯ টার দিকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বারোমাইল নফরপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৮ টায় ‘দৈনিক দেশেরপত্র’ পত্রিকা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে বের হন হেযবুত তওহীদের সদস্য উপজেলার বাহিরচর ইউনিয়নের বারোমাইল মুন্সিপাড়া গ্রামের আলিমুদ্দি মুন্সির পুত্র শান্ত আলী। তার সাথে ছিলেন- একই এলাকার মো. আক্কাস আলী মালিথার পুত্র আব্দুর রাজ্জাক, মো. রহমান আলী মুন্সির পুত্র সুমন আলী। এসময় নফর পাড়া ঈদগাহ মাঠে নামাজ শেষে মুসল্লীদের মাঝে পত্রিকা বিক্রয় করতে থাকলে নফরপাড়া মসজিদের ইমাম আব্দুল মতিন পত্রিকা বিক্রি করতে বাধার সৃষ্টি করে। তিনি এটা নাজায়েজ পত্রিকা, খ্রিস্টান, ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে তার অনুসারী চরমোনাই ও হেফাজতকর্মীদেরকে উস্কানি দিয়ে হামলার নির্দেশ দেন।
এসময় আব্দুল মতিন ও তার অনুসারীরা পত্রিকা বিক্রেতা হেযবুত তওহীদের তিন সদস্যের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত ও জখম করে। হাত ও লাঠি দিয়ে এলোপাতারি মারধর করতে থাকে। তাদের সাথে থাকা একটি টেকনো স্পাক জিও মডেলের মোবাইল ফোন ও ১৫০০ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পরে খবর পেয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় আহতদের ভেড়ামারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় ভেড়ামারা থানায় আব্দুল মতিনকে প্রধান আসামী করে ১১ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামীরা হলেন- নফরপাড়া গ্রামের মো. চাঁদ মণ্ডলের ছেলে নাসির মণ্ডল ও নাজিম মণ্ডল, মহর আলীর ছেলে বেলাল হোসেন ও হেলাল হোসেন, বিশু মণ্ডলের ছেলে সবুজ আলী, ফজলু মণ্ডলের ছেলে মো. রকিবুল, মৃত কলম আলীর ছেলে জাকের আলী, কাশে আলীর ছেলে মোমিন আলী, কুব্বাত আলীর ছেলে মো. রানা, শহিদুল ইসলামের ছেলে মো. সাগর।
এ বিষয়ে ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মজিবুর রহমান জানান, এ ব্যাপারে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটির তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

খুলনাতে পত্রিকা বিক্রয়ের সময় হেনস্থা করাতে দিতে হল মুচলেকা সহ ক্ষতিপূরণ: ঈদের দিন খুলনার দৌলতপুর রেলগেটে পত্রিকা বিক্রি করতে যান হেযবুত তওহীদ সদস্যা মিম আক্তার ও নিপা আক্তার। এসময় স্থানীয় এক ব্যক্তি একটি পত্রিকা ক্রয় করে এবং এরপর থেকে ফলো (অনুসরণ) করতে থাকে। এর এক পর্যায়ে ওই দুই নারী সদস্যকে কুপ্রস্তাব দিয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য ডাকে। এসময় তারা প্রতিবাদ করলে পথচারীরা জড়ো হয়। এরপর সেই মোল্লা স্থানীয় হওয়ায় কিছু লোক তাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে মিম আক্তার তাকে ধাওয়া করলে ওই ব্যক্তি পালিয়ে যায়। কিন্তু তার ফুফাতো ভাই তার পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়ে মুচলেকা দেয় এবং পত্রিকার ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩০০০ টাকা আর্থিক জরিমানা দেয়।

শেরপুরে গ্রামবাসীদের বাধায় ধর্মব্যবসায়ী মঞ্জুরুল হক ও তার সহকারীর পলায়ন: গত বৃহস্পতিবার দুপুরে শেরপুর সদরের মুন্সির চরে পত্রিকা বিক্রি করতে গিয়ে মঞ্জরুল নামে এক ধর্মব্যবসায়ীর বাধার শিকার হন হেযবুত তওহীদের তিন সদস্য। এসময় তারা গ্রামবাসীদের সামনে পত্রিকা বিক্রি করতে নিষেধ করা সহ খ্রিস্টান বলে আপবাদ দেয়। হেযবুত তওহীদ সদস্যরা তাদের থানায় নিতে চাইলে ওই ব্যক্তি এক সদস্যের হাত থেকে সবপত্রিকা কেড়ে নেয় এবং গণধোলাইয়ের হুমকি দেয়। এর এক পর্যায়ে সেখানে উপস্থিত গ্রামবাসীর সক্রিয়তার কারণে তাঁদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। একপর্যায়ে ওই গ্রামবাসীদের বাধায় মঞ্জুরুল ইসলাম ও তার সহকারী ব্যক্তিটি পালিয়ে যায়।

মীরসরাইতে মুচলেকা দিল হেফাজত ও ছাত্রলীগের দুই সন্ত্রাসী:
আব্দুল মতিন ও রফিকুল ইসলাম। তারা দুজনেই হিযবুত তওহীদের সদস্য। ২২ তারিখ বৃহস্পতিবার সকালে তারা দুজনে গিয়েছিলেন দৈনিক বজ্রশক্তি পত্রিকা বিক্রি করতে। স্থান চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার অন্তর্গত জোরারগঞ্জ থানার বামনসুন্দর দারোগা বাজার এলাকা।
পত্রিকা বিক্রয়কালে স্থানীয় পোল্ট্রি ফিড ব্যবসায়ী ও হেফাজত কর্মী মাজহারুল ইসলাম রিপন আব্দুল মতিনকে পত্রিকা বিক্রিতে বাধা দেয়। ছাত্রলীগ কর্মী ইফতেখার আলম হিমুর নেতৃত্বে ছাত্রশিবির ও হেফাজতে ইসলামের সমর্থক প্রায় ২৫/৩০ জন লোক আব্দুল মতিনকে কিল, ঘুষি মারতে থাকে। তারা সবগুলো পত্রিকা (প্রায় ১০০ কপি) কেড়ে নিয়ে যায়। আব্দুল মতিন পাকা রাস্তায় পড়ে হাঁটুতে ও হাতের আঙ্গুলে মারাত্মক আঘাত পান। এই ঘটনার সংবাদ পেয়ে হেযবুত তওহীদের কয়েকজন সদস্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং আক্রমণকারীদেরকে আইনের হাতে সোপর্দ করবেন বলে ঘোষণা করেন।
ঘটনার সময় সেখানে বহু লোক জড় হয়ে যায়। যাদের অনেকেই হেযবুত তওহীদ সদস্যদের পক্ষ অবলম্বন করে। তারাও ইফতেখার ও মাজহারের সন্ত্রাসী আচরণের প্রবল প্রতিবাদ করে। অতঃপর কাটাছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ হোসেন খোকনের মধ্যস্থতায় বিষয়টির মীমাংসা হয়। সন্ত্রাসীরা পত্রিকা বিক্রয়ের মতো একটি সমাজকল্যাণমূলক ও বৈধ কাজে বাধাপ্রদান করার অপরাধ স্বীকার করে গাড়িভাড়াসহ ৫০০ টাকা জরিমানা প্রদান করে। তারা পত্রিকাগুলো ফিরিয়ে দেয় এবং জনসমক্ষে কান ধরে ওঠবস করে হেযবুত তওহীদ সদস্যদের হাত ধরে ক্ষমা প্রার্থনা করে।
তারা লিখিত মুচলেকায় উল্লেখ করে যে, আমরা হেযবুত তওহীদের কার্যক্রম সম্পর্কে না জেনে, না বুঝে তাদের উপর আক্রমণ করতে উদ্যত হই, পত্রিকা নিয়ে টানা হেঁচড়া করি যা আইনগতভাবে অন্যায়। ভবিষ্যতে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর আচর-আচরণ করব না।

শরিয়তপুরে পত্রিকা বিক্রয়কালে সন্ত্রাসী হামলা:
গত বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই ২০২১) শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ থানা সদরে পত্রিকা বিক্রির সময় হেযবুত তওহীদের দুই সদস্যাকে পত্রিকা বিক্রি করার কারণে এক দোকানদার গালাগালি করে এবং মারতে উদ্যত হয়। খবর পেয়ে হেযবুত তওহীদের স্থানীয় আমির সেখানে পৌঁছলে দোকানদার কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে কয়েকজন সন্ত্রাসীকে নিয়ে তার উপর হামলা করে বসে। কোদালের বড় একটা আছাড়ি নিয়ে আসে তাকে আঘাত করার জন্য। কিন্তু হেযবুত তওহীদ সদস্যা মাঝখানে গিয়ে রুখে দাঁড়ান এবং দোকানদারকে প্রতিরোধ করেন। বাধা পেয়ে তারা আরো উগ্র হয়ে ওঠে এবং বলে যে কোনো মহিলাকেও ছাড়বে না। সবাইকে ইচ্ছেমত ধোলাই করবে। তারা আমিরের ফোন কেড়ে নেয়, তখন একজন সদস্যা সন্ত্রাসীদের হাত থেকে সেই ফোনটা কেড়ে নিয়ে আমিরকে দেন। তারপর আবারও তারা ফোন কেড়ে নেয়। সেখানে হিযবুত তওহীদের চারজন সদস্য ও চার জন সদস্যা ছিলেন। সন্ত্রাসীদের ইচ্ছে ছিল সবাইকে আটক করে প্রচণ্ড মারধোর করবে। এরই মধ্যে অনেক লোক জড় হয়ে যায়। তখন দোকানদার ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে। সে আমিরের উপর অপবাদ আরোপ করে যে, তিনি নাকি চোর, ক্যাশ থেকে টাকা চুরি করেছেন, তারপর তাদের ছবি তুলেছেন ইত্যাদি। কিন্তু বাজার কমিটির সেক্রেটারি এসে দোকানদারকে থামান এবং হেযবুত তওহীদের সদস্য-সদস্যাদেরকে বলেন সেখান থেকে চলে আসতে। এরপর তারা চলে আসেন।

সুনামগঞ্জে পত্রিকা বিক্রয়ে মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষকদের বাধা:
সুনামগঞ্জ সদরে পত্রিকা বিক্রির সময় মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষকদের বাধার মুখে পড়েন হেযবুত তওহীদের দুই সদস্যা আমাতুল বুসরা চৈতি ও পপি আক্তার। ঈদের পরদিন গত বৃহস্পতিবার সুরমা ইউনিয়নের মুসলিমপুর গ্রামের আবু হুরায়রা (রা.) এতিমখানা ও মাদ্রাসার সামনে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার দিন পত্রিকা বিক্রির উদ্দেশ্যে মাদ্রাসার সামনে দিয়ে তারা হেঁটে যাওয়ার সময় মাদ্রাসা শিক্ষক তফাজ্জল হোসেন এগিয়ে এসে পত্রিকা বিক্রি করতে নিষেধ করেন এবং গালমন্দ করতে থাকেন। তার সাথে যোগ দেয় মাদ্রাসার ১৪-১৫ জন ছাত্র। তারা যুক্তিতর্কে সদস্যাদের সঙ্গে না পেরে আরো বেশি ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত হয়ে ওঠে। ঐ ইউনিয়নে চার-পাঁচটা পত্রিকা বিক্রয়কারী টিম কাজ করছিল। টিমগুলোর কাজ তত্ত্বাবধান করছিলেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার আমির আহমেদ রোমান সরকার। সংবাদ পেয়ে তিনি সেখানে উপস্থিত হন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। তিনি মাদ্রাসা ছাত্রদের মারমুখী আচরণের প্রতিবাদ করেন। কিন্তু পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে ওঠে। এসময় ঘটনাস্থলে শুরু থেকে বসে থাকা জনৈক মুফতি আজিজুল হক মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকদের চুপ থাকতে বলেন এবং হেযবুত তওহীদ সদস্যদের চলে যাওয়ার অনুরোধ করেন। বিষয়টি স্থানীয় এন.এস.আই দফতরে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে।

Related Articles

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker