জাতীয়

হেযবুত তওহীদের এমামের আহবান ‘মানবজাতিকে নতুন সভ্যতার নেতৃত্ব দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে’

মানবজাতিকে নতুন সভ্যতায় নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলি অর্জনে প্রস্তুতি নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের দুর্নীতির ফলে এই সমাজ এখন ধংসের দ্বারপ্রান্তে। মানুষ এই সভ্যতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাই নতুন সভ্যতার আগমন অবশ্যম্ভাবী। এখন মানবজাতিকে এই নতুন সভ্যতায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যে গুণাবলি প্রয়োজন তা আত্মস্থ করতে হবে। প্রস্তুতি নিতে হবে।

গতকাল রাজধানীর তেজগাঁও কলেজ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ আহবান জানান। ‘হুজুগ, গুজব, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে হেযবুত তওহীদের ঢাকা মহানগরী শাখা। অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। ঢাকা মহানগরীর সভাপতি ডা. মাহবুব আলম মাহফুজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সাংবাদিক জোটের সাধারণ সম্পাদক এস এম সামসুল হুদা। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের তেজগাঁও শাখা আমীর মো. আলহাম এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সিলেট বিভাগীয় আমির মো. আলী হোসেন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের উপদেষ্টা খাদিজা খাতুন, নারী বিভাগের প্রধান রূফায়দাহ পন্নী, স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান উম্মুত তিজান মাখদুমা পন্নী।

মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, আজ বিশ্ব ব্যবস্থা নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। এরইমধ্যে বিশ্বে গত কয়েক শতাব্দি ধরে চরম নৈরাজ্যবাদী একটি সিস্টেম গড়ে উঠেছে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর দেশে দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে মারা গেছে। সমাজবাদীদের সিস্টেমের যাতাকলে পিষে মানুষ তার নীতি-নৈতিকতা হারিয়েছে। এখন দুনিয়াতে এক টুকরো মাটি নেই যেখানে মানুষ শান্তিতে রয়েছে।
হেযবুত তওহীদের এমামের আহবান ‘মানবজাতিকে নতুন সভ্যতার নেতৃত্ব দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে’

তিনি বলেন, আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে তার খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়েছেন। তাই মানুষের কর্তব্য হচ্ছে এই পৃথিবীতে ন্যায়সঙ্গতভাবে ন্যায়বিচার-সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা। আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে খেলাফতের দায়িত্ব পালন করা। কিন্তু বর্তমানে মানুষ সেই দায়িত্ব পালন না করে নিজেদের তৈরি জীবনব্যবস্থা দিয়ে জীবন পরিচালনা করছে। যান্ত্রিক এ সভ্যতার কাছে নিজেদের পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছে। ফলে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি, দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার, অর্থনৈতিক অবিচার, রাজনৈতিক অবিচার, সামাজিক অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ চতুর্দিকে বিপদের সম্মুখীন হয়েছে। প্রকৃতির উপর অবিচারের ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে দ্বন্দ, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, সমাজে অস্থিরতা এমনকি নিজ পরিবারেও অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের আত্মা আজ দেউলিয়া। এরফলে প্রমাণিত হয়েছে মানুষের তৈরি এ জীবনব্যবস্থা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, মানুষ এখন নতুন সভ্যতার আশা করছে। সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হলে এখন নতুনভাবে পৃথিবীকে সাজাতে হবে। শান্তির বার্তা নিয়ে আসা ধর্মগুলো ধর্মব্যবসায়ীদের কবলে পড়ে তার আসল রূপ হারিয়েছে। ধর্মব্যবসায়ীরা নিজেরা হানাহানি করে, ছোটখাটো বিষয় নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করে, বাড়াবাড়ি করে, সীমালংঘন করে মানুষের মন থেকে ধর্মকে মুছে ফেলছে। ফলে ঐক্যবদ্ধ মুসলিম জাতি আজ টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। অন্যদিকে এক শ্রেণির লোক ধর্মকে ব্যবহার করে অপরাজনীতি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে ইসলামের ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছে। মানুষ আজ দিশেহারা। শান্তির ধর্ম ইসলামের প্রতিও মানুষ আজ আস্থা রাখতে পারছে না।

হেযবুত তওহীদের এমাম বলেন, ধর্মব্যবসায়ীরা ইসলামের যে সংকীর্ণ রূপ বিশ্বের সামনে তুলে ধরছে; তাতে বিশ্বব্যাপী যে আদর্শিক সঙ্কট রয়েছে তা মোকাবিলা করা অথবা বিশ্ব পরিচালনা করা সম্ভব নয়। কিন্তু হেযবুত তওহীদকে আল্লাহ ইসলামের যে প্রকৃত রূপের সন্ধান দিয়েছেন; যা দিয়ে এই সঙ্কট মোকাবিলা করা সম্ভব। হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমামুযযামান মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী মানবজাতির সামনে ইসলামের সেই প্রকৃত রূপ তুলে ধরেছেন। হেযবুত তওহীদ মানবজাতির জন্য শান্তির বার্তা নিয়ে এসেছে। সর্বপ্রকার অন্যায়-অবিচারমুক্ত একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনের লক্ষ্যে  সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে সংগ্রাম করে যাচ্ছে।

হেযবুত তওহীদের সদস্যদের প্রতি আহবান জানিয়ে দলটির এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, এই মহান আদর্শ মানবজীবনে প্রতিষ্ঠা করতে হলে আগে নিজেদের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। বর্তমান বিশ্ব জ্ঞান-বিজ্ঞানে, প্রযুক্তিতে বহুদূর এগিয়ে গিয়েছে। এখানে অযৌক্তিক কর্মকান্ড, বিজ্ঞানহীনতা, ধর্মীয় গোঁড়ামির কোন স্থান নেই। বিশ্বে এখন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে করোনা মহামারীর ফলে সৃষ্ট লকডাউনের কারণে অর্থনৈতিক অবস্থা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। চলমান জলবায়ু সঙ্কট, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বাণিজ্য নীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এই সমস্যা আরো বাড়িয়ে তুলেছে। এসব কিছু মোকাবিলা করতে হলে হেযবুত তওহীদের সদস্যদেরকে একদিকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে, শিক্ষা-দীক্ষায় যেমন নিজেদের সমৃদ্ধ করতে হবে; অন্যদিকে উন্নত নৈতিক চরিত্র হাসিল করতে হবে। তিনি আরো বলেন, হেযবুত তওহীদের পাঁচ দফা কর্মসূচির উপর প্রত্যেককেই অটল থাকতে হবে। কোনভাবেই এর বিচ্যুতি করা যাবে না। কোন অপশক্তিকে ভয় না পেয়ে সাহসিকতার সাথে লড়াই করে যেতে হবে। কোন জঙ্গিবাদী কর্মকান্ড জড়ানো যাবে না। কারো কাছে মাথা নত করা চলবে না। এক মহান নৈতিক চরিত্রে নিজেদের বলীয়ান করতে হবে। নাহলে এই ভয়াবহ সঙ্কট মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না। নিজেদের মোমেন হিসেবে না তৈরি করতে পারলে এই সঙ্কট মোকাবিলায় আল্লাহও আমাদের সাহায্য করবেন না।

বিকাল ৩ টায় শুরু হওয়া এ অনুষ্ঠানে রাজধানীর তেজগাঁওসহ আশেপাশের বিভিন্ন স্থান থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে লোকজন অংশগ্রহণ করে। এসময় অনুষ্ঠানস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। অনুষ্ঠান শেষে আগত অতিথিদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। পরে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। ‘মাটি মিউজিকের’ পরিবেশনায় এতে গান পরিবেশন করেন ভোকালিস্ট নাজমুল আলম শান্তু, মো. শাহীন আলমসহ দলের অন্যান্য সদস্যরা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker