সারাদেশ

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে হেযবুত তওহীদের ‘মিট দ্যা প্রেস’ অনুষ্ঠিত

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে হেযবুত তওহীদের ‘মিট দ্যা প্রেস’ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার বিকেল ৪টায় বেগমগঞ্জ প্রেসক্লাব কার্যালয়ে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ‘অপপ্রচার, গুজব সৃষ্টি এবং ধর্মীয় অনুভ‚তিকে ব্যবহার করে হত্যাকান্ড, জ্বালাও-পোড়াও ও লুটপাটের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমকে অবহিতকরণ’ প্রসঙ্গে এই ‘মিট দ্যা প্রেস’ অনুষ্ঠানে নোয়াখালী জেলার গুরুত্বপূর্ণ সাংবাদিক ব্যক্তিত্বগণ উপস্থিত ছিলেন।

উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি জনাব মো. নিজাম উদ্দিন। প্রধান অতিথি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন হেযবুত তওহীদের সদস্যদের উপর দীর্ঘদিন ধরে চলা অন্যায়, অবিচার, অপপ্রচার ও নির্যাতনের কথা। বিশেষ করে ২০১৬ সালের ১৪ই মার্চ তাঁর বাড়ি তথা হেযবুত তওহীদের এমামের বাড়িতে নির্মাণাধীন মসজিদকে গীর্জা বলে গুজব রটিয়ে যারা হামলা চালিয়েছিল এবং দুইজন হেযবুত তওহীদের সদস্যকে প্রকাশ্যে জবাই করে হত্যা করেছিল, সেই লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা ও তথ্যচিত্র তুলে ধরা হয় সাংবাদিকদের সামনে।

তিনি বলেন, একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী মানুষের ধর্মীয় অনুভুতিকে হাইজ্যাক করে এই ধ্বংসাত্মক ঘটনা ঘটিয়েছে এবং আরেকটি গোষ্ঠী পূর্ব পারিবারিক শত্রুতার জের ধরে এই হামলার নেপথ্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইন্ধন যুগিয়েছে। তিনি আরও বলেন- তার বাড়িতে হামলা, তান্ডব ও হত্যাকান্ডের ঘটনাটিকে পরবর্তীতে স্বার্থান্বেষী মহল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অপব্যবহার করেছে। ফলে সেই ঘটনায় জড়িত আসামীরা যথাযথ শাস্তির আওতায় আসছে না।

তারা সহজেই আইনী ধরাছোঁয়ার বাইরে গিয়ে দম্ভভরে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। নানা ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা হেযবুত তওহীদ শত্রুতার বদলে ভ্রাতৃত্বের, হিংসার বদলে সম্প্রীতির, ধ্বংসের বদলে নির্মাণের ও অজ্ঞতার বদলে শিক্ষার আলো জ্বালাচ্ছি। গত ২৭ বছর হেযবুত তওহীদ একটিও অন্যায় করেনি বা আইনভঙ্গের কাজ করেনি। তিনি দাবি করেন, কতগুলো সুস্পষ্ট নীতিমালার উপরে হেযবুত তওহীদ দাঁড়িয়ে আছে যা হেযবুত তওহীদের সদস্যরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করে, সেগুলো হলো- হেযবুত তওহীদ কখনো কোনো রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করবে না, কোনো অবৈধ অস্ত্রের সংস্পর্শে যাবে না, ইসলামের কোনো কাজ করে স্বার্থ উদ্ধার করবে না, যারা হেযবুত তওহীদের সদস্য নয় তাদের কাছ থেকে কোনো অর্থ গ্রহণ করা হবে না, সক্ষম কোনো মানুষ বেকার থাকবে না, কোনো ধরনের মাদক সেবন ও মাদক-ব্যবসার সংস্পর্শেও যাবে না, রাষ্ট্রীয় আইন পরিপন্থী কোনো কাজ করবে না।

কাজেই এমন ধরনের সত্যনিষ্ঠ মানবতার কল্যাণকামী আন্দোলনের নামে মিথ্যা গুজব সৃষ্টি করে জনগণের মধ্যে ঘোলাটে পরিবেশ সৃষ্টি করার কোনো সুযোগ নেই। বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক উপ-সম্পাদক এবং দৈনিক বজ্রশক্তির সহকারী সাহিত্য সম্পাদক জনাব রাকীব আল হাসান। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধর্মান্ধতা ও ধর্মীয় উগ্রপন্থার উত্থান ঘটছে। মানুষের ধর্মীয় অনুভ‚তিকে ব্যবহার করে দেশে দেশে অপরাজনীতি করা হচ্ছে এবং সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা সৃষ্টি করা হচ্ছে।

সাধারণত সরকারগুলো শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে এই সঙ্কট মোকাবেলার চেষ্টা করে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন শুধু শক্তিপ্রয়োগ করে ধর্মান্ধতা মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। শক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি সঠিক আদর্শও লাগবে। ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরতে হবে এবং জনগণকে সচেতন করতে হবে। উগ্রবাদ মোকাবেলায় ইসলামের সেই প্রকৃত ব্যাখ্যা বা সঠিক আদর্শ (কাউন্টার ন্যারেটিভ) তুলে ধরছে হেযবুত তওহীদ। তিনি বলন, ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা এবং আদর্শ ধর্মপ্রাণ মানুষদের সামনে তুলে ধরতে পারলে ইসলামের নামে চলা এ ধরনের উগ্রবাদ, ধর্মান্ধতা, ধর্মব্যবসা দূর করা সম্ভব। তার প্রমাণ, ইসলামর প্রাথমিক যুগে শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) ইসলামের প্রকৃত আদর্শ ও শিক্ষা দিয়ে আরবের জাহেলি সমাজ পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন। জাহেলি সমাজ দূর হয়ে আলোকিত সমাজ বিনির্মিত হয়েছিল, হানাহানিতে লিপ্ত মানুষগুলো ভাই হয়ে গিয়েছিল।

রসুলাল্লাহর সেই প্রকৃত ইসলাম যখন ছিল তখন কিন্তু এই অন্ধত্ব, এই উগ্রবাদ, কুপমন্ডুকতা, ধর্মব্যবসা ইত্যাদি ছিল না। ইতিহাসের কাল-পরিক্রমায় দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা সেই প্রকৃত ইসলামের রূপ হারিয়ে ফেলেছি। বর্তমানে ধর্মব্যবসায়ী একটা গোষ্ঠী ব্যক্তিস্বার্থে, গোষ্ঠীস্বার্থে, রাজনৈতিক স্বার্থে ইসলামকে ব্যবহার করে নানা ধরনের হীন অভিসন্ধি বাস্তবায়ন করছে, এতে মানবতার কোনো কল্যাণ হচ্ছে না। হেযবুত তওহীদের স্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে আবারও যদি ধর্মের নামে চলা এসকল অধর্ম বন্ধ করতে হয় তাহলে ইসলামের প্রকৃত রূপ মানুষের সামনে তুলে ধরার বিকল্প নেই।

এই কাজটিই সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে, মানবতার কল্যাণে সম্পূর্ণ নিজেদের অর্থব্যয়ে করে যাচ্ছে হেযবুত তওহীদ। হেযবুত তওহীদের এমামের বাড়িতে সংঘটিত হামলার সাথে বিভিন্নভাবে জড়িত ব্যক্তিদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয় অনুষ্ঠানে। এছাড়া এলাকার উন্নয়নের জন্য ও লকডাউন পরিস্থিতিতে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় হেযবুত তওহীদের গৃহীত ৪২টি উন্নয়ন প্রকল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে হেযবুত তওহীদের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয় এবং হেযবুত তওহীদের চলমান কার্যক্রম সম্পর্কে গণমাধ্যম কর্মীদেরকে অবহিত করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হেযবুত তওহীদের বেগমগঞ্জ থানা সভাপতি শাহিদুর রহমান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker