চাকরি বার্তা

চাকরির ইন্টারভিউ : যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ

আপনাকে কেন নির্বাচন করব ? – এই প্রশ্নের উত্তর যেভাবে দিবেন

সাক্ষাৎকারের শুরু থেকে শেষ অবধি চাকরিদাতা জানতে চান, কেন আপনাকে নির্বাচন করা হবে । আপনার মধ্যে কি গুণ আছে যা আপনাকে অন্যদের থেকে আপনাকে আলাদা করে কিংবা এমন কি আছে যা থেকে প্রতিষ্ঠান লাভবান হতে পারে। তাই যখন একজন চাকরিদাতা জিজ্ঞাসা করেন আপনাকে আমারা কেন নেব ? অর্থাৎ তিনি সত্যিই জানতে চাইছেন কেন আপনাকে নির্বাচন করবেন? তাই বলা হয়ে থাকে এই প্রশ্নটি আপনাকে চাকরি পাইয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট, যদি আপনি তার উত্তরটি সঠিক ভাবে দিতে পারেন।তাহলে আসুন জেনে নেই কিভাবে দিবেন এই প্রশ্নের উত্তর।


কেন এই প্রশ্নটি করা হয়

সাক্ষাতকারের প্রতিটি প্রশ্নের পিছনে একটি উদ্দেশ্য থাকে। এই প্রশ্নটিও তার ব্যতিক্রম নয়। এই প্রশ্নের মাধ্যমে চাকরিদাতা যা জানতে চান তা হলো:

১. আপনি নিজেকে তুলে ধরতে পারেন কি না?

২. আপনি অন্যদের থেকে কতটুকু দক্ষ

৩. আপনাকে যে পদের জন্য নিয়োগ দেয়া হবে সেই পদটির জন্য আপনি সত্যিই নিজেকে উপযুক্ত মনে করেন কিনা

৪. আপনার ভেতরের আত্মবিশ্বাস কতটুকু তা দেখতে চান

৫. আপনি যে সত্যিই একজন ভালো প্রার্থী তার একটি যথাযথ প্রমাণ চান

৬. সর্বোপরি আপনি প্রতিষ্ঠানকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম কিনা তা জানতে চান


কিভাবে বলবেন

আপনার উত্তরের মাঝে এমন কিছু ফুটে উঠা চায় যা শুনে একজন চাকরিদাতা মনে করেন আপনিই সেরা। কিন্তু এই সেরা কথাটি সরাসরি না বলে বুঝিয়ে বলতে হবে। বোঝাতে হবে কেন আপনি সেরা। কেন আপনি নিজেকে সেরা মনে করেন। আর কিভাবে প্রতিষ্ঠান আপনার দ্বারা লাভবান হবে। এই সব কিছুই বলে বোঝাতে হবে উত্তরের মাধ্যমে । যাতে উত্তরটির পর চাকরিদাতার কাছে যথেষ্ট পরিমাণ কারণ থাকে আপনাকে নিয়োগ করার। আর এই বিষয়গুলো ফুটিয়ে তুলার জন্য ৩টি বিষয় উত্তরের মাঝে ফুটিয়ে তুলতে হবে। এই তিনটি বিষয় হলো:

১. উত্তরের মাঝে নিয়োগকর্তার চাহিদাকে ফুটিয়ে তোলা

বলুন কিভাবে নিয়োগকর্তা লাভবান হবেন। কিভাবে আপনি লাভবান হবেন তা নয়।সব নিয়োগকর্তাই জানতে চান আপনাকে নিয়োগ দেয়ার মাধ্যমে তারা কিভাবে লাভবান হবে। অতিরিক্ত আর কি দিতে পারবেন যা প্রতিষ্ঠানকে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাই আপনার উত্তরের মাঝে এই বিষয়টি তুলে ধরুন। এই বিষয়টি তুলে ধরার জন্য আবেদন করা পদের সাথে সামঞ্জস্য স্কিলগুলো তুলে ধরুন। যেমন হতে পারে আপনি ক্রেতাদের সাথে সহজ ও সাবলীলভাবে কথা বলতে পারেন। আপনি ক্রেতাদের সমস্যা খুব সহজে সমাধান দিতে পারেন ইত্যাদি।

২. বক্তব্যের মাঝে সামঞ্জস্য

আপনার বক্তব্যের মাঝে আবেদনকৃত পদের সাথে সামঞ্জস্য রাখুন। ধরুন আপনি যে পদে আবেদন করেছেন সেই পদের জন্য এমন একজনকে চাইছে যার মাইক্রোসফট এক্সেল এর উপর ভালো ধারণা আছে। যার মাঝে চাপের মুখে কাজ করার মানসিকতা আছে এবং যে একজন ভালো টীম প্লেয়ার। আপনার বক্তব্যে এই বিষয়গুলো তুলে ধরুন। বলুন আপনি কিভাবে একজন ভালো টীম প্লেয়ার এবং তা কিভাবে এই পদটিতে সাহায্য করবে। প্রমাণ দিন আপনি কিভাবে চাপের মুখে কাজ করতে পারেন এবং তা প্রতিষ্ঠানের জন্য কিভাবে সুফল বয়ে আনতে পারবে।

৩. বিশেষ গুণাবলী তুলে ধরা

আপনার বিশেষ গুণ তুলে ধরুন যা অন্যদের থেকে আলাদা। যা আপনাকে একজন অনন্য প্রার্থী হিসেবে প্রমাণ করে। মনে রাখবেন, কেন আপনাকে নির্বাচন করবে তার কিন্তু একটি যথাযোগ্য উত্তর দেয়া চাই যা সত্যিই অন্যদের মাঝে সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না।আপনি যদি এমন কিছু বলেন যা অন্যদের মাঝেও আছে তাহলে নিয়োগকর্তা কেন আপনাকে নির্বাচন করবেন। তাই নিজেকে আলাদা করে তুলতে হবে।বলতে হবে কিভাবে আপনি অন্যদের থেকে আলাদা।সর্বোপরি কিভাবে আপনি আপনার কাজে দক্ষ ও সেরা। কেননা সেরা প্রার্থীকেই একজন চাকরিদাতা চাকরি দিবেন।


যে উত্তরগুলো কখনোই নয়

আগেই বলেছি এই প্রশ্নের উত্তরটি গুরুত্বের অপেক্ষা রাখে না। তাই একটু ভুল আপনার ভালো সাক্ষাৎকারটিকে ব্যর্থতার দিকে ঠেলে দিতে পারে।তাই উত্তরের মাঝে যে বিষয়গুলো কখনোই আসা উচিত নয় তা হলো:

১. নিজেকে অতি দুর্বলভাবে তুলে ধরা , যেমন আমি একজন ফ্রেশার্স আমার কোনো অভিজ্ঞতা নেই আপনি যদি আমায় চাকরিটি দেন তাহলে আমি আমার সর্বাত্মক চেষ্টা করবো চাকরিটি ভালো মতো করার

২. উত্তরের মাঝে সাধারণ বিষয়বস্তু তুলে ধরা যা আলাদা ভাবে কোনো কিছু প্রমাণ করে না। যেমন আমি একজন পরিশ্রমী কিন্তু বললেন না কিভাবে আপনি পরিশ্রমী। অথবা বললেন আমি প্রেজেন্টেশনে ভালো কিন্তু বললেন না কেন ভালো ইত্যাদি।

৩. উত্তরটি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি দীর্ঘ করা। আপনার উত্তরটি সংক্ষিপ্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। অতিকথন উত্তরকে দুর্বল করে তুলে এবং চাকরিদাতাদের মাঝে বিরক্তির কারণ হতে পারে। মনে রাখবেন চাকরির সাক্ষাৎকারের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর ১ থেকে ২ মিনিটের বেশি হওয়া উচিত নয়।


যেভাবে নিজেকে তৈরি করবেন

একটি ভালো উত্তর একটি ভালো প্রস্তুতির ফলাফল। তাই এই উত্তরটি তৈরি করার জন্য প্রস্তুতি নিন। এই প্রস্তুতি নেয়ার জন্য যা করবেন তা হলো:

১. আপনি যে সকল বিষয়ে ভালো তার একটি তালিকা তৈরি করুন

২. যে পদের জন্য আবেদন করছেন সেই পদের বিষয়াবলী আরো একবার ভালো করে দেখে নিন। জেনে নিন চাকরিটি করার জন্য কি কি বিষয় চাওয়া হচ্ছে। সেই সকল বিষয়ের একটি তালিকা তৈরি করুন।

৩. এর পর মিলিয়ে দেখুন যা চাইছে তার কি কি আপনার মধ্যে আছে আর কি কি নেই।

৪. আপনি বিষয়গুলোর উপর কতটুকু দক্ষ তা বের করুন। আপনার দক্ষতার প্রমাণ আপনি কিভাবে দিবেন তা ঠিক করুন।

৫. আপনার দক্ষতা অন্যদের থেকে কিভাবে আলাদা তা ঠিক করুন এবং তা কিভাবে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য পূরণে সহায়ক তা ঠিক করুন

৬. ২ মিনিটের একটি বক্তব্য তৈরি করুন যার মাঝে উপরে বর্ণিত বিষয়গুলো থাকবে

৭. অনুশীলন করুন , এমনভাবে করুন যাতে তা খুব সহজ ও সাবলীল হয় , যাতে তা মুখস্থ করে এসেছেন এই রকম না শোনায়।

এইভাবে নিজেকে প্রমাণের মাধ্যমে আপনি চাকরিদাতাকে জানিয়ে দিতে পারেন কেন আপনি দক্ষ , কেন তারা আপনাকে নিয়োগ দিবে। মনে রাখবেন আপনার সাক্ষাৎকারের একটি টার্ম কার্ড হতে পারে এই প্রশ্নের উত্তরটি। যদি উত্তরটি চাকরিদাতাকে সন্তুষ্ট করতে পারে তাহলে আপনার চাকরিটি যেমন নিশ্চিত হয়ে যায় ঠিক তেমনি উত্তরটি মনঃপুত না হলে, তা চাকরি সাক্ষাৎকার থেকে বাদ পরার অন্যতম কারণ হওয়ে দাঁড়ায়। কেননা সবাই চায় তার প্রতিষ্ঠানের জন্য সেরা কর্মীটিকে নির্বাচন করতে , আর এই শ্রেষ্ঠত্বকে প্রমাণ করতে পারে সেই, যে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিতে পারে সুনিপুনভাবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker