টেক বার্তা

ফেসবুক থেকে কিভাবে টাকা উপার্জন করতে হয়

“টাকা আয় করার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি কি?”

“ঘরে বসে কিভাবে টাকা আয় করা যায়?”

“ইশ এমন কোনো মাধ্যম থাকতো, যেন খুব দ্রুতই হাতে কিছু টাকা চলে আসতো”

এমন প্রশ্ন হরহামেশাই শোনা যায়। এমনকি আমাদের নিজেদের মনেও উঁকি দেয় এরকম হাজারো প্রশ্ন। ছাত্রজীবনে টিউশুনির গণ্ডির বাইরে তাকালেই দেখা যায় এই হাহাকার। কিন্তু এতসব প্রশ্নের কিন্তু খুব সহজ একটা উত্তর রয়েছে। উত্তরটা হলো ফেসবুক থেকে আয়!

দিনের অন্তত একবার হলেও আমরা ফেসবুকে ঢু মারি, অন্যের ছবিতে লাইক-কমেন্ট করি, নিজের টাইমলাইনে বিভিন্ন পোস্ট শেয়ার করি, বন্ধুদের সাথে ম্যাসেঞ্জারে তুমুল আড্ডা দিই। এসবের পাশাপাশি ২.৩২ বিলিয়ন ইউজার সমৃদ্ধ ফেসবুকে কিন্তু চাইলেই গড়ে তোলা যায় ছোটখাটো একটা অনলাইন স্টার্টআপ। বিভিন্ন ফ্যানপেজ তৈরি করা, ভিডিও বানানো, ফেসবুক গেম ডেভেলপ করা, অনলাইন শপের মত হাজারো পদ্ধতির মাধ্যমেই ফেসবুক হয়ে উঠতে পারে আপনার আয়ের উৎস।

ফেসবুক পেজ থেকে আয়

ফেসবুকে চোখ বুলালেই হাজারো পেজের ভীরে আমাদের চোখ ধাঁধায়। মানসম্মত কন্টেন্টসহ একটি ফেসবুক পেজ কিন্তু সহজেই কমবেশি অনেকের নিউজ ফিডেই প্রাধান্য পাবে।

ফেসবুক পেজ থেকে টাকা ইনকাম করার নিয়ম এ প্রথম ধাপ হলো ফেসবুকে একটি পেজ খুলে নেওয়া। এক্ষেত্রে আপনার নিজের আগ্রহের পাশাপাশি অন্যদের আগ্রহকেও প্রাধান্য দেয়া উচিত। ফেসবুক পেজ হতে পারে যেকোনো ধরনের। যেমন- ফুড রিভিউ, ট্রাভেল পেজ, নিউজ পোর্টাল কিংবা ট্রেন্ডি কোনো ট্রল পেজ। ট্রল পেজের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে, যেন এটি কোনো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে আঘাত না করে বা কোনো বিতর্ক সৃষ্টি না করে। তাহলে কিন্তু আপনার ফেসবুক থেকে আয় এর উদ্দেশ্যের হিতে বিপরীত হতে পারে!

একটি ফেসবুকের পেজ মূল অংশ হলো কন্টেন্ট বা বিষয়বস্তু। ফেসবুক ইউজারদের এই বিশাল সংখ্যার কাছে আপনার পেজের গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করে কন্টেন্টের উপর। মানসম্মত ও সুন্দরভাবে বর্ণিত যেকোনো কন্টেন্ট ভালো ইউজারদের মাঝে সাড়া জাগাতে অনেকটাই সহায়ক। কন্টেন্ট তৈরি থেকে শুরু করে পরবর্তীতে বেশ কিছু পদক্ষেপ অবলম্বন করতে হবে । যেমন-

  • আপনার ফ্যান পেজের জন্য একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট তৈরি করুন। ফেসবুকে পেজের পাশাপাশি একটি ওয়েবসাইট থাকা কিন্তু বেশ কাজের। আপনার কন্টেন্টের বিশদ বর্ণনা থাকবে এসব ওয়েবসাইটে। ওয়েবসাইট তৈরির জন্য আপনি ব্লগস্পট, ওয়ার্ডপ্রেস কিংবা উইবলির সাহায্য নিতে পারেন। ফ্রি ডোমেইনের কিছু সীমাবদ্ধতা থেকে বেরিয়ে আসতে আপনি অল্প কিছু টাকা খরচ করে বানিয়ে নিতে পারেন আপনার নিজেরই একটি ওয়েবসাইট।
  •  “অ্যাডসেন্স (AdSense)” নামক গুগলের একটি প্রোগ্রাম রয়েছে, যা ওয়েবসাইট থেকে টাকা আয় করার জন্য সাড়া বিশ্বব্যাপী বহুল ব্যবহৃত। অ্যাডসেন্সের কাজ হলো ওয়েবসাইটে বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপনের সরবরাহ করা এবং বিনিময়ে ওয়েবসাইটের পরিচালনাকারীদের একটি নির্দিষ্ট অর্থ দেয়া। প্রায়সময়ই বিভিন্ন ওয়েবসাইটে হাজারো অ্যাড আমাদের নজরে আসে এবং এগুলোই আপনার ফেসবুক পেজের ওয়েবসাইটে ব্যবহার করতে পারবেন গুগল অ্যাডসেন্স যুক্ত করার মাধ্যমে। এর ফলে আপনি আপনার ফেসবুক পেজ থেকে টাকা ইনকাম করা শুরু করতে পারবেন।Google Adsense
    • ফেসবুকে পেজে নিয়মিত নিত্যনতুন কন্টেন্ট হালনাগাদ করা অনেক জরুরী। বেশি বেশি কন্টেন্ট আপলোড করলে আপনার পেজ প্রতিনিয়তই নতুন নতুন মানুষের চোখে পড়বে, লাইক-কমেন্ট-শেয়ারের পরিমাণও বাড়তে থাকবে দ্রুতই।
    • ফেসবুক থেকে আয় এর ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে, আপনার শেয়ার করা কন্টেন্ট যেন অন্য কোনো আর্টিকেলের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ না হয়। কেননা অনেক ফেসবুক পেজের নিজস্ব কপিরাইট থাকে। অনেক অনেক ক্ষেত্রে রিপোর্ট করার মাধ্যমেও আর্টিকেল চুরির বিষয়টা চোখের সামনে চলে আসে। কন্টেন্ট হুবুহু প্রমাণিত হলে ফেসবুক কতৃপক্ষ সেসব পোস্ট তাৎক্ষনাত সরিয়ে দেয়।

    ফেসবুকে আপনার পেজ তৈরি করা শেষ, শেষ কন্টেন্ট বানানোর কাজও। এবার এগোতে হবে কন্টেন্ট বা পোস্টগুলো বিক্রি করার দিকে। শপসামথিং (shopsomething.com) নামক অনলাইন একটি ওয়েবসাইট আছে যেখানে আপনি আপনার ফেসবুক পোস্ট বিক্রি করতে পারেন। এখানে নিজের একাউন্ট খুলে আপনার ফ্যান পেজের প্রতিটি পোস্টের জন্য নির্দিষ্ট মূল্য ধার্য করে দিতে হবে।

    আপনাকে নির্দিষ্ট অর্থ দিয়ে এসব পোস্ট ক্রয় করা হবে এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন অ্যাডভারটাইজের জন্য এসব পোস্ট, পোস্টের ছবি ব্যবহার করা হবে। মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, শুরুতেই অতি চড়া মূল্যের পোস্টে কিন্তু কেউই আগ্রহ দেখাবে না। তাই মাত্রাতিরিক্ত দাম চাওয়া থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়।

ফ্রিল্যান্সিং

আমরা যারা অনলাইনে আয় করার পদ্ধতি সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখছি, তাদের কাছে ফ্রিল্যান্সিং সবচেয়ে পরিচিত একটা নাম। ফেসবুকের মাধ্যেমেও কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং সম্ভব। ফ্রিল্যান্সিং শুরু করলে সবচেয়ে বড় বাঁধা থাকে কাজ পাওয়া-না পাওয়া নিয়ে। দেখা যায়, অনেক ফ্রিল্যান্সাররা নিজের পছন্দ ও যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ খুঁজে পাচ্ছে না। ফেসবুকে ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে কিছু সক্রিয় গ্রুপ আছে। এসব গ্রুপের মেম্বাররা বিভিন্ন কাজের অপরচুনিটি শেয়ার করে। এর ফলে অনেকেই খুঁজে পেতে পারেন আপনার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য। কন্টেন্ট রাইটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং, অনলাইন মার্কেটিং এর মত নানা ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য ফেসবুকে রয়েছে হাজারো গ্রুপ ও পেজ।

ক্রয়-বিক্রয়

বাসায় অব্যবহৃত একটি ফোন পড়ে আছে? সময়ের অভাবে আপনার প্লেস্টেশনটি চালানো হচ্ছেনা? পুরাতন ডিজিটাল ক্যামেরাটা বিক্রি করে নতুন একটি ডিএসএলআর কিনতে ইচ্ছুক? এরকম হাজারো খুঁটিনাটি জিনিস কিন্তু আমরা চাইলেই ফেসবুকের মাধ্যমে বিক্রি করে দিতে পারি। ফেসবুকে কেনাবেচার (Buy and Sell) এর অসংখ্য গ্রুপ রয়েছে। কোনো কোনো গ্রুপ নির্দিষ্ট পণ্য কেনাবেচার জন্য, আবার কোনোটিতে পণ্য বিক্রি সম্পর্কে ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই।

এসব গ্রুপে আপনার অব্যবহৃত যেকোনো পণ্যের জন্য সহজেই সঠিক ক্রেতা খুঁজে পেতে পারেন। তবে অনলাইনে এসব ক্রয় বিক্রয়ের সময় সতর্ক থাকতে হয়, যেকোনো লেনদেনের পূর্বে ক্রেতা সম্পর্কিত সকল ধরণের তথ্য নিশ্চিত করতে হবে, একইসাথে নিশ্চিত করতে হবে টাকা আদান-প্রদানের সুরক্ষিত মাধ্যমও।

পৃথিবীজুড়ে সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতাই ফেসবুককে গড়ে তুলেছে আয় করার সহজ ও দ্রুত একটি মাধ্যম হিসেবে। সামান্য মেধা, সঙ্গে ঘড়ির একটু সময় দিলেই ফেসবুক হয়ে উঠতে পারে আপনার আয় করার প্রধান মাধ্যম। শুধুমাত্র চ্যাটিং আর লাইক-কমেন্টের বেড়াজালে আটকে না থাকে আপনি ঘরে বসেই শুরু করতে দিতে পারেন আপনার ফেসবুক থেকে ইনকাম করার নতুন পরিকল্পনা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker