ফিচার

অন্যের কথা শুনে মাসে আয় লাখ টাকা

জীবিকার তাদিগে মানুষকে কত কিছুই না করতে হয়। এজন্য কেউ করছেন চাকরি, কেউ বা ব্যবসা। আবার অনেকে আছেন এর কোনোটাই করতে চান না। ১০টা-৫টা অফিস, আবার বাড়ি ফিরেও অফিসের আপডেট রাখা। এত ঝামেলা এড়িয়েও মাসে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করছেন।

এদের মধ্যে কেউ ঘুমিয়ে, কেউ আবার লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে কিংবা অন্যকে জড়িয়ে ধরে আয় করছেন লাখ টাকা। তবে জাপানের এক ব্যক্তি অন্যদের কথা শুনে আয় করছেন মাসে লাখ টাকারও বেশি। এটিকে তিনি পেশা হিসেবে নিয়েছেন।

৩৮ বছর বয়সী জাপানের টোকিওর বাসিন্দা শোজি মরিমোটো। নতুন একটি কাজ শুরু করেছেন। কাজটি হচ্ছে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অন্যের মনের কথা বসে থেকে শুনতে হবে। বিনিময় পাবেন সময় অনুযায়ী টাকা। অদ্ভুত এই কাজটিকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন শোজি।

এই প্রজেক্টের নাম দিয়েছেন ‘ডু নাথিং রেন্ট আ ম্যান’। এর মাধ্যমেই তিনি টাকার বিনিময় অন্যের সঙ্গে সময় কাটান, কথা শোনেন। ২০১৮ সালে এই পেশা শুরু করেন শোজি। তবে শখ করে এই পেশায় আসেননি তিনি। অন্যান্য আর দশ জনের মতো পড়াশোনা শেষ করে চাকরির খোঁজে দিন কাটিয়েছেন।

দীর্ঘদিন চাকরির পেছনে ঘুরেও কোথাও কাজ জোটেনি শোজির। এক সময় সিদ্ধান্ত নেন নিজে কিছু করবেন। তবে সেজন্য যে অর্থের প্রয়োজন তার কিছুই ছিল না তার। তাই অন্য কোনো কিছু করার কথাই ভাবতে থাকেন।

শুরুতে ‘ডু নাথিং রেন্ট আ ম্যান’ নামে একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট খোলেন। তারপর থেকেই বিভিন্ন স্তরের মানুষ সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন। শুরু করেন তাদের পরিষেবা দেওয়া। মূলত এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা সারাদিন বাড়িতে একাই থাকেন। বাড়ির অন্য সদস্যরা হয়তো ব্যস্ত থাকার কারণে সেভাবে সময় দিতে পারেন না। যেসব মানুষের একাকীত্বের সঙ্গী হন শোজি। বসে বসে তাদের কথা শোনেন, একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেন। পাশে বসে থাকেন। তবে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মুখ খোলেন না তিনি। শোজির দায়িত্ব এতটুকুই।

মজার এই কাজটি শোজি বেশ ভালোভাবেই করে যাচ্ছেন। কাজের সময় ছাড়া কারো সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না। কোনো গ্রাহকের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক যাতে গড়ে না ওঠে, সে বিষয়েও অত্যন্ত সতর্ক থাকেন শোজি। শুধু শোজিই নয়, এরই মধ্যে শোজিকে অনুসরণ করে প্রায় তিন হাজার মানুষ যুক্ত হয়েছেন এই পেশায়।

শোজি এ জন্য বেশি টাকা নেন না। শুধু ট্যাক্সি ভাড়া এবং দুপুরের খাবারের টাকাটাই নেন শোজি। তবে এভাবেই মাসে তার লাখ টাকার বেশি ইনকাম হয়ে যায়। দিনে কম হলেও তিনটি ক্লায়েন্টকে সময় দেন তিনি।

 

তবে শোজি তার ক্লায়েন্টদের সঙ্গে কী কী করেন, কত ধরনের মানুষের সঙ্গে তার দেখা হয়েছে, তাদের গল্প এসব সম্পর্কে তিনি এরই মধ্যে ৪টি বই লিখে ফেলেছেন। তবে সেগুলো গল্প উপন্যাসের আদলে নয় একেবারেই। কমিক আকারে বইগুলো লিখেছেন শোজি। যেন অন্য কোনো সঙ্গীহীন ব্যক্তি বইগুলো পড়ে সময়টা কাটাতে পারেন।

জাপান সবচেয়ে সুখী দেশগুলোর মধ্যে একটি। এখানকার মানুষ এতোই শৃঙ্খল জীবনযাপনে অভ্যস্ত যে কারণে তাদের আয়ুও তুলনামূলক অনেক বেশি। এছাড়াও তাদের খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন সব কিছু অন্যান্য দেশের মানুষের চেয়ে আলাদা। এজন্য জাপানে বয়স্ক মানুষের সংখ্যাও বেশি। আবার রিটায়ার্ডমেন্টের পর তাদের একাকীত্ব ভোগেন এমন মানুষও আছে অনেক। ফলে আত্মহত্যার সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। শোজির এমন উদ্যোগ একদিকে মানুষের একাকীত্ব দূর করছে অন্যদিকে আত্মহত্যার প্রবণতাও কমাচ্ছে মানুষের মধ্যে থেকে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker