ফিচার

কালামানিক কুষ্টিয়ার এক হারিয়ে যাওয়া কিংবদন্তির নাম

আলীফ আজগর সবুজ : সত্তরের দশক থেকে টানা ষোল বছর দাপিয়ে বেড়িয়েছেন কুষ্টিয়া সহ গোটা দেশের ফুটবলের মাঠ।যাকে তৎকালিন সময় থেকে আজ অব্দি কুষ্টিয়ার ক্রীড়াঙ্গনের সবাই চেনেন ফুটবলের জাদুকর কালামানিক। যার হাত ধরে কুষ্টিয়ার আনাচে কানাচে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে অসংখ্য স্পোর্টস ক্লাব আর খ্যাতনামা ক্রিয়াবিদ।সেই বাংলার ম্যারাডোনা খ্যাত মুসা এখন বয়সের ভার আর শরীরে বাসাবাধা নানা রোগব্যাধি নিয়ে একরকম অসহায় জীবনযাপন করছেন পূর্ব মজমপুরের ওস্তাদ ভাই সড়কের বাড়িতে ।

কালামানিক

খবরের বাইরে চলে যাওয়া এই ক্রীড়াবিদের খোঁজ রাখেননি কেউ। এই কালামানিক জীবনে হতে পারতেন অনেক কিছু। কিন্তু পারেননি। কৃত্তি মান ফুটবলার হিসেবে শুধু নামই কামিয়েছেন। সেভাবে কামাতে পারেনি অর্থ। মালিক হতে পারেননি বিত্ত বৈভবের। তাই আজ তার কোন খোঁজ-খবরও নেয় না ক্রিড়া সংশ্লিষ্ট কেউই। আজকের দিনে এদেশের একজন গড়পড়তা পরাজিত মানুষ এই মুসা । অথচ একদিন তার ছিল স্বর্ণালী দিন ঘরভর্তি রঙ হারানো ট্রফিগুলো,আর কিছু পুরোনো স্মৃতি চিন্হ আজও সেই দিনগুলোর সাক্ষ্য দেয়। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ আর চোখের রোগের চিকিৎসা ভার মেটাতে সঞ্চয়ের সবটুকু হারাতে বসা এ ক্রীড়াবিদ যেন বিছানায় ধুকে ধুকে মরতে বসেছে । কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের আড়পারায় জন্মগ্রহণ তিনি।

১৯৬০ সালে ইন্টার স্কুল টুর্নামেন্টে অংশ গ্রহন করে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দেন সবাইকে। এরপর একের পর এক অর্জনের অগ্রযাত্রা।১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৭৪ পর্যন্ত খেলেছেন ওয়াপদা ক্লাবের হয়ে এরপর ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ওয়ান্ডারস’র হয়ে খেলেছেন একবছর। সেই সময় খুলনা বিভাগের এমন একটা ফুটবল দল ছিলনা যারা মুসাকে পেতে মরিয়া ছিলোনা।সময়টা ১৯৭৩।মুসার তেজ দীপ্ত দুরন্ত গতির ফুটবল নৈপুণ্যে শেরে বাংলা জাতীয় ফুটবল টুর্নামেন্টে কুষ্টিয়া জেলা দল প্রথমবারের মতো রানারআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে।সেই সাথে এই লীগে স্বাধীনতা উত্তর প্রথম কোন ফুটবলার হিসেবে হ্যাট্রিক গোলের রেকর্ড গড়েন। মুসা দেশব্যাপী কালামানিক খ্যাতি ছড়িয়ে যায় ১৯৭৭ সালে। ঐ বছর উওর বঙ্গের রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত শেরে বাংলা টুর্নামেন্টে কুষ্টিয়ার হয়ে আবারো অংশ নেন মুসা।গোটা টুর্নামেন্টে মুসার অনবদ্য তেজস্বী স্ট্রাইকিং আর শৈল্পিক নৈপুণ্যে কুষ্টিয়া রানারআপ হয়।

আর মুসা পায় সেরা খেলোয়াড় হিসেবে সোনার হরিন পুরস্কার। মুসার বিশেষত্ব ছিল তার উচ্চতা।খাটো হওয়ার সত্বেও তার চাইতে বেশি উচ্চতার খেলোয়াড়দের মাথা ছাড়িয়ে হেডের মাধ্যমে গোল করে দেশব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। টানা ষোল বছর ফুটবলের মাঠে যার এককথায় একচ্ছত্র আধিপত্য ছিলো সেই ভুলতে বসেছে কুষ্টিয়াবাসী। তবে কি স্বীকৃতিবিহীন অগোচরে এভাবে নিঃশেষ হয়ে যাবেন তিনি। তার পাশে দাড়ানোর জন্য সরকারের সহযোগিতা চাইছে তার শুভাকাঙ্ক্ষীসহ পরিবারের সদস্যরা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker