ফিচার

জমির নামজারি কীভাবে করবেন

নামজারি বা মিউটেশন হচ্ছে জমিসংক্রান্ত বিষয়ে মালিকানা পরিবর্তন করা। জমি হস্তান্তর হলে খতিয়ানে পুরোনো মালিকের নাম বাদ দিয়ে নতুন মালিকের নাম প্রতিস্থাপন করাই হচ্ছে নামজারি। নামজারির মাধ্যমে জমির আগের জোতজমা থেকে খারিজ (কর্তন) হয়ে আবেদনকারীর নামে নতুন হোল্ডিং বা জোতের সৃষ্টি হয়। সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে নামজারির (মিউটেশন) জন্য আবেদন করতে হয়।

কীভাবে আবেদন করতে হয়

বর্তমানে জমির নামজারির ক্ষেত্রে ই-নামজারি পদ্ধতি চালু হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল মাধ্যমে নামজারি সম্পন্ন হচ্ছে। এক মাসের মধ্যে এটা সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। ই-নামজারি করতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আবেদন করতে হয়। আবেদনের সঙ্গে সাধারণত মালিকের পরিচয়পত্র, ছবি, মোবাইল নম্বরসহ জমির বিস্তারিত পরিচয় দিতে হয়। খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, জমির পরিমাণ, মৌজা, জেলা উল্লেখ করতে হবে এবং দলিলের স্ক্যান কপি আপলোড করতে হবে। পরবর্তী সময় সমস্ত দলিলের এক সেট সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে জমা দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অনলাইনেই নামজারির ফি জমা দেওয়া যায়। নামজারি আবেদনটি কোন স্তরে আছে, ওয়েবসাইট থেকেই তা যাচাই করা যায়।

জমির নামজারি কীভাবে করবেন

নামজারি যেভাবে সম্পন্ন হয়

নামজারি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত বা যাচাই-বাছাই হয়। নামজারির জন্য প্রস্তাবিত জমি দখলে আছে কি না, এটি খাসজমি কি না, অধিগ্রহণ করা হয়েছে কি না, সম্পত্তির মূল পরিমাণ ঠিক আছে কি না, মামলা–মোকদ্দমা চলছে কি না—সাধারণত এগুলো যাচাই করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সহকারী কমিশনার (ভূমি) তা যাচাই-বাছাই করে দেখেন। প্রয়োজনে তিনি আবারও তদন্তে প্রেরণ করতে পারেন। পরে যাবতীয় কাগজপত্র, দলিল মিলিয়ে দেখে মিউটেশনের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদন হলে খতিয়ান খোলা হয়। পক্ষগণ হাজির হতে হয় এবং শুনানিকালে যাবতীয় দলিল পরীক্ষা করা হয়। এর ভিত্তিতে আবেদন মঞ্জুর বা নামঞ্জুর হয়।

সতর্কতা

নামজারি করানোর সময় নির্ধারিত জমি পরিমাপ করে নেওয়া উচিত। নামজারির আবেদন করার পর জমির সহশরিক এবং ক্রেতা-বিক্রেতাকে নোটিশ দেওয়ার নিয়ম আছে। কোনো ধরনের অভিযোগ থাকলে তখন আপত্তি দিতে হয়। কিন্তু অনেক সময় নোটিশ যথাযথভাবে পৌঁছায় না। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

নামজারি করাতে নির্দিষ্ট ফি আছে। এ ফির বাইরে অতিরিক্ত ফি কেউ দাবি করলে তা বেআইনি। নামজারিতে অনেক সময় দাগ নম্বর ভুল হতে পারে। এটি অনিচ্ছাকৃতও হতে পারে। অনেক সময় সঠিক তদন্তের অভাবে দাগ নম্বর ভুল হয়। এ ক্ষেত্রে যদি মনে হয় যে কর্মকর্তা ইচ্ছে করে ভুল করেছেন কিংবা কোনো প্রকার দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ উত্থাপন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, নামজারি সংশোধনের জন্য আবেদন করতে হবে কিংবা সংশোধনের জন্য প্রয়োজনে মিস কেস দায়ের করতে হবে।

নামজারির আবেদন ভুল বা নামঞ্জুর হলে কী করবেন

নামজারি করার ক্ষেত্রে কোনো ‘করনিক’ ভুল হলে সহকারী কমিশনার( ভূমি) নিজেই সংশোধন করতে পারেন। আর যদি ভুলটি গুরুতর হয়, তাহলে মিস কেস দাখিল করতে হয়ে তাঁর কাছেই। তিনি এর পরিপ্রেক্ষিতে আদেশ দিতে পারেন। যেকোনো কারণেই নামজারি আবেদন নামঞ্জুর হতে পারে। আবেদন নামঞ্জুর হলে প্রতিকারের সুযোগ রয়েছে। আবেদন নামঞ্জুর হলে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) আদেশের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) কাছে আদেশের ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হবে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ আছে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের (রাজস্ব) কাছে এবং তা করতে হয় আদেশের ৩০ দিনের মধ্যে। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের (রাজস্ব) আদেশের বিরুদ্ধে ভূমি আপিল বোর্ডে আদেশের ৯০ দিনের মধ্যে আপিল করা যায়। তবে ক্ষেত্রবিশেষে দেওয়ানি আদালতেও মামলা করা যায়।

এ ছাড়া রিভিশনের পথও খোলা রয়েছে। ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা তাঁর নিজের ইচ্ছায় নথি তলব করে সংশোধনের আদেশ দিতে পারেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ৩০ দিনের মধ্যে তাঁর অধীন কর্মকর্তাদের আদেশ সংশোধন করতে পারবেন। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) তিন মাসের মধ্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) আবেদন সংশোধন করতে পারেন। ভূমি আপিল বোর্ড ছয় মাসের মধ্যে তাঁর অধীন কর্মকর্তার আদেশ সংশোধন করতে পারেন।

তানজিম আল ইসলাম সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker