কুর্শায় দূর্নীতির মহোৎসবে মেতেছে চেয়ারম্যান ওমর
নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রায় আঠারো শতক জমির অর্ধেকে পাকা বাড়ি। চাষের জমি আছে চার একরেরও বেশি। দুই পুকুরে চলছে মাছ চাষ।সেই সাথে রয়েছে গোয়াল ভরা গরু । তাঁর আয়ের এসব উৎসের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছে সরকারের ‘বয়স্ক ভাতা’।তিনি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের বাঁশবাড়ীয়া রামনগর এলাকার বাসিন্দা জিয়ারত আলী।বয়স হলেও আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় তিনি ও তার স্ত্রী সাবাতন নেছা
একইসাথে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির এ সুবিধা পাওয়ার যোগ্য নন। তবুও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ওমর আলীকে মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে এই সুবিধা কিনতে হয়েছে বলে সরল স্বীকারোক্তি তাদের। ভাতাভোগী সাবাতন নেছা বলেন, তার জামাতা মিজানুরের রহমানের মাধ্যমে চেয়ারম্যান ওমরকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে এই সুবিধাভোগীর তালিকায় ঠাই হয়েছে তার। এতো গেল জিয়ারত আলী ও তার স্ত্রী সাবাতন নেছার কথা।একই এলাকার আমোদ আলীর মেয়ে সাজেদা খাতুন, যদিও তিনি হতদরিদ্র। তবে তার জাতীয় পরিচয় পত্র বলছে ভিন্ন কথা।১৯৭০ সালের পাঁচ অক্টোবর জন্ম তার।তিনিও একই কায়দায় চেয়ারম্যান ওমরকে পাচ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ৫০ বছর বয়সেও পেয়েছেন বয়স্ক ভাতার কার্ড । একই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মাজিহাট এলাকার বাসীন্দা ৭৪ বছর বয়স্ক হামিদা খাতুনকেও ছয় হাজার টাকার বিনিময়ে কিনতে হয়ছে বয়স্ক ভাতার কার্ড। এ যেন রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি’র মতো। অসহায় ও দুস্থদের কথা চিন্তা করে সরকার বিনামূল্যে বিধবা, বয়স্ক-প্রতিবন্ধী ভাতাসহ নানা সেবা দিচ্ছে। কিন্তু এসব সেবা পেতে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কুর্শা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে দিতে হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। চেয়ারম্যানের এমন কৃতকর্মে অনেকটা নিরুপায় হয়ে পড়েছেন ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ ও ইউপি সদস্যারা। মিরপুর উপজেলা সমাজ সেবা অফিস সূত্রে জানা যায় শুধূমাত্র বয়স জনিত অনিয়মের কারনে চলতি বছরে এপর্যন্ত ১১২ জনের বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। তবে এ অপকর্মে জড়িতদের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোন শাস্তিমূলক ব্যাবস্থা নেননি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। জানতে চাইলে মিরপুর উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার জামসেদ আলী বলেন,সরকারের সামাজিক নিরাপত্তার এ ভাতা পেতে কোন প্রকার আর্থিক লেনদেনের সুযোগ নেই, তাছাড়া এর আগে জাতীয় পরিচয় পত্র টেম্পারিং করে অনেকেই বয়স বাড়িয়ে এ সুবিধা পেয়েছেন।তবে বয়স্ক ভাতার এসব কার্ড ইতিমধ্যে আমরা ডিজিটাল উপায়ে বাতিল করেছি। স্থানীয়দের দাবি নামেই তিনি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। এ পুঁজি ব্যবহার করে গত পাচ বছরে তিনি নানা অনিয়ম, দূর্নীতি আর সেচ্ছাচারিতার মধ্য দিয়ে বিপুল বিত্ত বৈভবের মালিক বনে গেছেন। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তার বিভিন্ন ভাতার কার্ড বিক্রি দিয়ে শুরু, এরপর কি করেননি তিনি।ইউনিয়নের মাজিহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে থাকাকালীন লক্ষ লক্ষ টাকার তসরুপ , শিক্ষকদের বেতনের টাকা আত্মসাৎ ,সরকারী বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, মাদক ব্যাবসায় মদদদানসহ কি অভিযোগ নেই তার বিরুদ্ধে । তবুও অনেকটা বহাল তবিয়তে নানা অনিয়ম আর দূর্নীতির ছড়ি ঘুরিয়ে যাচ্ছে তিনি। জানা যায় এর আগেও দূর্নীতিগ্রস্থ চেয়ারম্যান ওমরের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক মহামারী করোনার শুরুর দিকে ,সরকারী ভিজিডির চাল ও জাল জালিয়াতের মাধ্যমে বয়স্ক ভাতা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে বিভিন্ন গন মাধ্যমে সংবাদ প্রচার হয়। আদালতের দৃষ্টি গোচর হলে কুষ্টিয়ার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট সেলিনা খাতুনের আদালত স্বপ্রনোদিত হয়ে এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন করেন। যে মামলাটি এখনো বিচারাধীন রয়েছে। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান ওমর আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন।সামনে নির্বাচন তাই আমার প্রতিপক্ষ আমাকে বেকায়দায় ফেলতে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।একই পরিবারের দুজন বয়স্ক ভাতা পাচ্ছে এমনটা আমার জানা নেই। তাছাড়া বয়স্ক ভাতার কার্ড বিক্রির সাথে আমি জড়িত নই। এবিষয়ে মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিংকন বিশ্বাস বলেন,আমি মনেকরি অর্থ লেনদেনের মধ্যে কোন সচ্ছতা থাকে না।যিনি নিয়েছেন আর যিনি দিয়েছেন তারা সমান অপরাধী। বিষয়টি অনাঙ্খিত।অভিযোগ পেলে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।