অপরাধ

হালসায় ডাক্তার সেজে মেডিকেল এ্যাসিস্টেন্ট নাঈমের অভিনব প্রতারনা ! 

নিজস্ব প্রতিবেদক : স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রি নেই। নেই বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের সনদও। তবুও রয়েছে ঝা-চকচকে চেম্বার। আছে সাইনবোর্ড। তাতে হরেক রকম চিকিৎসকের ভুয়া ডিগ্রি।

শুধু ওষুধের পরামর্শপত্র লিখে দেয়ার জন্য রোগীদের কাছ থেকে ভিজিট নিচ্ছেন ১৫০-২০০ মেডিক্যাল এ্যাসিস্ট্যান্ট কোর্সে ডিপ্লোমা পাস করে সরাসরি ‘চিকিৎসক’ পদবি ব্যবহার করে দীর্ঘ দিন ধরে মিরপুর উপজেলার হালসা বাজারে ব্যবসা করছেন অনেকে। সূত্রে জানা যায়, মিরপুরের হালসায় দিন দিন ভুয়া চিকিৎসকের সংখ্যা আশংকা জনক হারে বেড়ে যাচ্ছে। আর চিকিৎসায় কম খরচের আশায় এসব ভুয়া চিকিৎসকদের রোগীর সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়,ডাক্তার না হয়েও চিকিৎসা সেবার নামে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারনা করে আসছে নাঈম বিশ্বাস নামের এক ভূয়া ডাক্তার । সে নামমাত্র ডিপ্লোমা কোর্সে সার্টিফিকেট অর্জন করে ব্যাবস্থাপত্র ও নিজ ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে নিজেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পরিচয় দিয়ে প্রতারিত করছে ঐ এলাকার সাধারন মানুষকে। চিকিৎশাস্ত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্থাৎ প্রাক স্নাতক উপাধি প্রাপ্তদের এমবিবিএস ডাক্তার বলা হয়। যারা তাদের নামের পূর্বে ডাক্তার লেখার বৈধতা রাখেন।বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল এ্যাক্ট ২০১০ এর ২৮। (১) ধারায় বলা হয়েছে যদি কোন ব্যক্তি প্রতারণার আশ্রয় লইয়া ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে একজন স্বীকৃত মেডিকেল চিকিৎসক বা স্বীকৃত ডেন্টাল চিকিৎসক হিসাবে এই আইনের অধীনে নিবন্ধন, অথবা নিবন্ধন করিবার উদ্যোগ গ্রহণ, অথবা মিথ্যা বা প্রতারণামূলক প্রতিনিধিত্ব প্রকাশ করিবার চেষ্টা করেন অথবা মৌখিক বা লিখিতভাবে উক্তরূপ ঘোষণা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ, এবং তজ্জন্য তিনি ৩ (তিন) বৎসর কারাদন্ড অথবা ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হইবেন। একই আইনের ধারা(৩) এ বলা হয়েছে এই আইনের অধীন নিবন্ধনকৃত না হইয়াও যদি কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে এই আইনের অধীনে নিবন্ধনকৃত একজন মেডিকেল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক বলিয়া প্রতারণা করেন, অথবা প্রতারণামূলকভাবে তাহার নাম বা পদবীর সংগে নিবন্ধনকৃত মর্মে কোন শব্দ, বর্ণ বা অভিব্যক্তি ব্যবহার করেন, তাহার মিথ্যা পরিচয়ের দ্বারা অন্য কোন ব্যক্তি প্রতারিত না হইলেও, তাহার উক্ত কার্য হইবে একটি অপরাধ, এবং তজ্জন্য তিনি ৩ (তিন) বৎসর কারাদন্ড বা ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হইবেন।

অথচ হালসা বাজারে ডাক্তারের সহকারী, ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ অথবা কোন মেডিকেল এ্যাসিস্টেন্ট কোর্সে ডিপ্লোমার উপর ভিত্তি করে নামের আগে ডাক্তার পদবি ব্যাবহার সহজ বিষয় হয়ে পড়েছে । এ ধরণের ভুয়া ডাক্তারের ছড়াছড়ি গোটা হালসা ব্যাপী। এদের বিরুদ্ধে নেয়া হয়না কোন আইনি ব্যবস্থা। এদের হাতে পড়ে একদিকে যেমন শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হারাচ্ছে অনেকে,আরেক দিকে প্রতারিত হয়ে নিঃস্ব হচ্ছে গ্রামের অশিক্ষিত খেটে খাওয়া মানুষ। এমন একাধিক ভুয়া ডাক্তারের সন্ধান পাওয়া গেছে এই এলাকায়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হালসা ইসলামি এজেন্ট ব্যাংক রোডস্থ সর্দার সুপার মার্কেটে বিশ্বাস ফার্মেসী নামের একটি ভুয়া চিকিৎসালয় খুলে নাঈম বিশ্বাস নামের ঐ ব্যাক্তি নিজের নামের আগে ডাক্তার টাইটেল জুড়ে দিয়ে রঙিন প্রেসক্রিপশনে প্রতিদিন রোগী দেখছেন। সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ২টা এবং বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দিচ্ছেন স্পর্শ কাতর বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা।নব জাতক শিশু কিশোর রোগ সহ চর্ম,যৌন ও দন্ত রোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন তিনি। রোগীর প্রকার ভেদে ১-৫০০ টাকা পর্যন্ত নেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ভুয়া ডাক্তার নাঈম বিশ্বাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি নিজের অপরাধ স্বীকার করে বলেন, এই এলাকায় তার মত আরো অনেক পল্লী চিকিৎসক বা মেডিকেল সহকারীরা তাদের নামের পূর্বে ডাক্তার পদবী ব্যাবহার করছে। আমি করলে দোষের কি।

এলাকা বাসীর অভিযোগ, এ সকল ভুয়া চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া সিভিল সার্জনসহ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেই কোন মনিটরিং। যে কারণে তারা প্রকাশ্যে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করছে। তাছাড়া এই সকল ভুয়া ডাক্তারদের রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী পেটুয়া বাহিনী ও ক্ষমতাশীন দলের জনপ্রতিনিধিদের সাথে দহরম মহরম সম্পর্ক । যাদের ভয়ে সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে ভয় পায়। ভুক্তভোগী সাধারণ রোগীদের দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সকল ভুয়া চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।

এব্যাপারে মিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিংকন বিশ্বাস বলেন,অভিযোগ পেলে এদের ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Related Articles

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker